টেলিফোন,
চিত্রা কুণ্ডু বারিক,
রাত প্রায় আটটা বাজে। ঘরে এসে সবে পৌঁছলো পারমিতা। তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে। তাই ফ্রিজ থেকে জল নিয়ে খেতে খেতে দরজার কলিং বেলটা বেজে উঠল। ভিতর থেকে পারমিতা বলে ওঠে ওয়েট ওয়েট আসছি। জলের বোতল রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই একটি বাচ্চা ছেলে একটা পার্সেল হাতে দিয়ে ছুট দিল। পারমিতা কিছু বলার আগেই বা বোঝার আগেই নিমেষে হাওয়া। খানিকক্ষণ ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থেকে দরজা বন্ধ করে পার্সেল হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। ভাবতে থাকে সে তো কোনো অনলাইনে ওডার করে নি। তাহলে কোথা থেকে এলো, কেউ কি বদমাইশি করলো না কিছু উপহার স্বরূপ পাঠিয়েছে! কি আছে এতে! প্যাকেটটা খুলতে যাবে ঠিক সেই সময় ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং শব্দে ফোন বাজছে। রিসিভ করতে ওপাশ থেকে কণ্ঠস্বর এলো কি ম্যাডাম কি ভাবছো? খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ মানে ইয়ে মানে তেমন কিছু না।
তবে! কিছু তো বটেই কথার ভাঁজে বোঝা যাচ্ছে। তো কি হয়েছে শুনি যদি একটু হলেও সল্ভ করে দিতে পারি।
আরে না না কিছু হয়নি।
তাহলে এতো চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন ডারলি়ং। হাম হ্যায় না। ডোন্ট ওরি। বলো বলো মনে দ্বিধা না করে বলেই ফেলো। যাবো নাকি কাছে?
আরে না না আমি ঠিক আছি। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি কি করে বুঝলেন আমার মনের ভিতর কি চলছে? আপনি কি জানেন কিছু?
ওমা তোমার মনের কথা পড়তে পারি সব এটাও এখনও তুমি বুঝলে না। সত্যি তুমি এখনও তোমার মনে আমার জন্য জায়গা করতে পারোনি। এটা আমার দূর্ভাগ্য।
আচ্ছা মুশকিল তো! যাকে দেখলাম না, জানলাম না শুধু কণ্ঠ শুনেই ভালবেসে ফেলি কি করে? শুনুন না প্লিজ একটিবার তোমার নাম বলো না। ( থুরি আপনার নাম বলুন না )। কে আপনি একটিবার বলুন। নাহলে একটু হালকা ছোঁয়া দিন যাতে সামান্য হলেও বোঝার চেষ্টা করি আপনি কে?
এই তো কিছুটা হলেও কাছে এসে আবার দূরে সরিয়ে দিলে। ভাবছিলাম বলেই ফেলি আমি তোমার ভালবাসা। কিন্তু না বলবো না আমি কে! আগে বলো তুমি ভালবাস আমাকে? সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে? দেখো আমি তোমার মতো সুন্দর নয়। হয়তো দেখে অভক্তি হবে। কিন্তু আমার প্রেমে পা বাড়ালে বেরোনো কঠিন।
সে কি করে সম্ভব, আগে পরিচয় পাই তবে ভেবে দেখবো। ধরা দিন আমাকে।
আচ্ছা মিতা তুমি কি আমাকে একটিবার তুমি করে বলতে পারছো না। আমি জানি তুমি মনে মনে ভীষন ভালবেসে ফেলেছো। তুমি আমাকে চোখে হারাও প্রতি মুহূর্তে।
মোটেই না ইসস্ কোথাকার কোন পণ্ডিত এসেছে আমার মন জানতে। থাক দরকার নেই কোনো সাক্ষাৎ কোনো পরিচয়। আমি রাখলাম ফোন। কেটে দিলাম ইচ্ছে করে। প্যাকেটটা হাতে আছে তখনো। সময় হলো না দেখার। এবার খুলে দেখি।
ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং উফফ্ আবার সেই বকবক করে মাথা খাবে। থাক বাজতে থাকুক ফোন। আগে প্যাকেটের রহস্য উন্মোচন করি। প্যাকেট ছিঁড়তেই আবার বেজে উঠল ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং ফোন ধরতেই বললাম কি চাই তোমার?
এতো উতলা কেন তুমি। প্যাকেটটা একটু পরে দেখলেও চলবে। বলো না ভালবাসো আমায়। ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গেছি। সারাদিন অফিসে কাজ করে তারপর তোমার অপেক্ষায়। এখনও বাড়িতে গিয়ে পারিনি। শুধু তোমার কাছে একটি কথা শোনার জন্য।
চুপ করে ফোন পাশে রেখে জানলার কাছে গিয়ে উঁকি দিলাম। উমম ব্যাটাকে এবার ধরেছি। আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। খুব কথা বলেই চলেছে। দাঁড়াও এইবার মজা দেখাচ্ছি। কিন্তু মুখটা দেখতে পাইনি। ভাবলাম সামনে গিয়ে ধরি। কি সুন্দর শরীরের গঠন। ভারি মিষ্টি কণ্ঠস্বর। খুব চেনা চেনা লাগছে। আলতো ছোঁয়া দিতেই চমকে ওঠে । ওমনি ক্যাবলার মতো হেসে ওঠে। প্যাকেটটা তখনও পারমিতার হাতে। একটা ছবি আছে। সেটা আর কেউ নয় পারমিতার অফিসের বস।
প্রতিদিন বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকা সেই মানুষটি অথচ চোখে ধরা পড়ে নি কখনও। বলে ওঠে কোথায় লুকিয়ে থাকতে যে দেখতে পেতাম না!
তারপর সেই মানুষটি কথা আদায় করে বাড়ি ফেরে। এবার শুরু হলো তাদের আসল প্রেমের সম্পর্ক।
আমার লেখাটাও শেষ পর্যন্ত বন্ধ। চলুক ওদের সুন্দর ভালবাসা।