Spread the love

জ্যান্ত ঝংকেশ্বরী দেবীর পুজো মঙ্গলকোটে

সেখ রাজু,

বিষধর কেউটে প্রজাতির সাপের সঙ্গে বিংশ শতাব্দী থেকে সহাবস্থান করে আসছেন মঙ্গলকোটের গ্রামবাসীরা । কেউটে প্রজাতির সাপকে  ঝাঁঙলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবী হিসাবে মানেন গ্রামবাসীরা । রবিবার ঝাঁঙলাই সাপের পুজোয় মাতলেন গ্রামবাসীরা । প্রতিবছর গুরু পূর্ণিমার পরে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথিতে পুজো হয় ঝাঁঙলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর । ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু এবং নিগন-সহ সাতটি গ্রামে ঝাঁঙলাই পুজো হয় । পথ-ঘাট থেকে গৃহস্থের বাড়ির রান্নাঘর, শোবারঘর সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ । গ্রামবাসীদের ঝাঁঙলাই কাউকে কামড়ালে, তাকে মায়ের প্রসাদ হিসাবে বিবেচনা করে । গ্রামের পাশে ঝাঁঙলাই ডোবা থেকে স্নান সেরে এসে মন্দিরের মাটি সেই ক্ষতস্থানে লাগালেই সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস । তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন অনেকেই এই সাপের দংশনে হওয়ার পরেই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যায় ।উল্লেখ্য ৯০৯ বঙ্গাব্দে মুসুরি গ্রামের মুরলী মোহন চক্রবর্তী দেবী ঝঙ্কেশ্বরীর স্বপ্নাদেশে জানতে পেরেছিলেন পলসোনা মৌজার খুনগোড় এলাকায় দেবী মা আছেন । তারপর থেকেই এই পুজো আরম্ভরতার সঙ্গে শুরু হয় । সম্প্রদায় ভিত্তিক গ্রামবাসীরা নৈবেদ্য নিয়ে মায়ের কাছে এসে পুজো দেন ।পলসোনা গ্রামের ঝঙ্কেশ্বরী পুজোর পুরোহিত মলয় চ্যাটার্জি বলেন, লোকমুখে শুনতে পায় কালিয়া দহে কালনাগিনী হিসাবে অনেকে অভিহিত করেন আবার মা ঝাঁঙলাই আসলে কালনাগিনী । বেহুলা-লক্ষিন্দর পৌরাণিক গল্পে লক্ষিন্দর যে সর্পের দংশনে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি হলেন এই ঝংকেশ্বরী দেবী ।গ্রাম্যবধূ সান্তনা মন্ডল জানান -“দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে আমি এই গ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত । আজ পর্যন্ত ঝাঁঙলাই সাপের কামরে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে তার কাছে অজানা” । তিনি আরো জানান, -“আগে পুজোর দিন গ্রাম্যবধুরা নিজেদের বাবার বাড়ি চলে যেত । সেই রীতি রেওয়াজে এখন খামন্তি ঘটেছে । বাড়ির মেয়ে ও বৌমা, সকলেই একসাথে পুজোর আনন্দে আমরা মেতে উঠি । যেসব গ্রামে ঝাঁঙলাই রয়েছে সেখানে আর কোনও বিষধর সাপ ঘেঁষতে পারে না । ঝাঁঙলাই রাতে বের হয় না” । রবিবার ঝাঁঙলাই পুজোর দিন দেখা যায় সাপকে ধরেই ভক্তিভরে পুজো করছেন গ্রামবাসীরা । এই পুজো উপলক্ষ্যে সমগ্র গ্রামজুড়ে মেলা বসেছে । আট থেকে আশি  সকলেই প্রতিবছর এই পুজোর অপেক্ষায় বসে থাকে ।পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের আধিকারিকরা জানান, -“মানুষ এবং প্রাণীর সহাবস্থানের ফল। তাছাড়া বিষয়টি প্রাকৃতিকভাবেও ঘটেছে । সাপ এমনিতেই ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী । কোনও কারণ ছাড়া সে কামড়ায় না “।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *