জিআই তকমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পূর্বস্থলীর কাঠের পুতুল
সম্প্রীতি মোল্লা,
;বর্ধমান শহরের সীতাভোগ কিংবা মিহিদানা। অথবা শক্তিগড়ের লাংচা সবই বিশ্ব বাঙালির কাছে অতি পরিচিত নাম।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীর কাঠের পুতুল নিয়ে জেলাবাসীর গর্বের পরিধি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।পূর্ব বর্ধমান জেলার অতি প্রাচীন শিল্প পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের ‘জিআই’ বা ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন’ তকমা পাওয়ার কাজ এগিয়ে গেল বেশ কয়েক কদম। এই তকমার জন্য ইতিপূর্বে আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মতো জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কাঠের পুতুল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে ‘জিআই ড্রাইভ মিশন’ বলে জানা গেছে । পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা সিংলা সংবাদ মাধ্যম কে বলেন, – ‘পূর্বস্থলীর কাঠের পুতুলকে জিআই তকমা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”জিআই’ এর তকমা দেওয়ার অর্থ হল, -‘ কোনও একটি অঞ্চলের জনপ্রিয় পণ্যকে ভৌগোলিক ভাবে বিশ্বের কাছে চিহ্নিত করা। এর আগে এ সীতাভোগ-মিহিদানা ও জেলার দক্ষিণ দামোদরে উত্পাদিত গোবিন্দ ভোগ চাল ‘জিআই’ তকমা পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রায় দেড়শো বছর ধরে জড়িয়ে রয়েছে পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। শিল্পীদের তৈরি পেঁচা, রাজারানি ও গৌর-নিতাইয়ের বেশ সুনাম রয়েছে। ভোটের সময় জেলা প্রশাসনও ‘ম্যাসকট’ হিসেবে নতুনগ্রামের পেঁচাকেই তুলে ধরে থাকে । এখানকার শিল্পী শম্ভুনাথ ভাস্কর ১৯৫৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন ।এলাকার শিল্পীদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘ক্লাস্টার’। ‘ইউনেস্কো’র সঙ্গে তারা যুক্তও হয়েছে। নতুনগ্রামে তৈরি করা হয়েছে ‘হাব’। সেখানে থাকার জায়গা, কাজের জায়গা থেকে মিউজ়িয়াম পর্যন্ত করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে ।জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অভিজিত্ কর সংবাদ মাধ্যম কে বলেন, – ‘পূর্বস্থলীর নতুনগ্রামের শিল্পীদের নানা সময় সরকার সাহায্য করে। শিল্পীরা অনলাইনে বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিদেশিদেরও ওই গ্রামে যাতায়াত রয়েছে। ‘জিআই’ তকমা পেলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নতুনগ্রামের পুতুলের স্বীকৃতি মিলবে।”জিআই’ তকমা পাওয়ার পরে যখন ‘লোগো’ তৈরি হয়, তখন সচরাচর ব্যবসায়ীদের জন্য একটা গুণগত মাপকাঠি বেঁধে দেওয়াটাই রীতি।অর্থাত্, ওই মাপকাঠি পূরণ না করলে ‘লোগো’ ব্যবহারের অনুমতি মিলবে না। ৮২টি পরিবারের ২৮৯ জন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বছরে কোটি টাকার উপরে কেনাকাটা হয়। তার উপর জিআই ছাপ ও লোগো পেলে নতুনগ্রামের পুতুলের কদর আরও বাড়বে। জিআই তকমা মিললে নতুনগ্রামের সঙ্গে কাটোয়া সংলগ্ন অগ্রদ্বীপ স্টেশন এলাকার শিল্পীরাও লাভবান হবেন।জেলার আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষকদের দাবি , ‘দাঁইহাট শহরে প্রস্তর ভাস্করদের বিকাশ হয়েছিল। এই শিল্প লুপ্তপ্রায় হয়ে পড়ে। ভাস্করদেরও একটি শাখা নতুনগ্রামে উঠে গিয়ে কাঠের শিল্পের প্রচলন করেন। যার মধ্যে ইতিহাস ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে।’ সার্কিট ট্যুরিজম নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের তরফেও পূর্বস্থলীর এই কাঠের পুতুল বিপননের উপর প্রস্তাবনা ছিল।
ছবি সংগৃহীত