ছাত্র সমাজ ও সামাজিক মাধ্যম
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানবজাতির সৃষ্টি অনবদ্য। এই অনন্য সৃষ্টির মধ্যে ছাত্র সমাজ হলো অন্যতম। এই ছাত্র সমাজ/ যুব সমাজ সম্পর্কে অতীতে অনেক মহান ব্যক্তিত্ব নিজ নিজ মতামত পোষণ করেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি ছাত্র সমাজের ভূমিকা, শক্তি ও আদর্শ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ধারণা দিয়েছেন। একটি দেশের বা রাষ্ট্রের কাছে এই ছাত্র সমাজ হলো একটি মূল্যবান সম্পদ। তাদের ইচ্ছা শক্তি ও গঠনমূলক ভূমিকা একটি সমাজকে শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিতে পারে। অন্যদিকে তাদের নেতিবাচক ভূমিকা সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে ও পারে।
সাম্প্রতিককালে ছাত্র সমাজকে নিয়ে বিভিন্ন সমাজবিদ, শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিদের মধ্যে বেশ চর্চা পরিলক্ষিত হয়। তাদের স্বভাব,আদর্শ,মূল্যবোধ, ভূমিকা ও স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছাশক্তির মধ্যে অভাবনীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে, যে পরিবর্তন সমাজ ও মানবজাতির পরিপন্থী। অনেকের মতে এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া । এই সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এই ছাত্র সমাজ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের কাছে শিক্ষক-শিক্ষকl, পিতা-মাতা ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে, যার ফলে সমাজে শিক্ষাগত, নীতিগত ও মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটছে l বিজ্ঞান মানবজাতির সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও প্রগতির দিকে কাজ করলেও, ছাত্র সমাজ যে এর দ্বারা গভীর প্রভাবিত তার কোন সন্দেহ নেই।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিজ্ঞান নতুন প্রযুক্তিবিদ্যার উদ্ভাবন ঘটাচ্ছে আর এই উদ্ভাবনের অন্যতম এক উপাদান হলো মোবাইল। এই মোবাইলের দ্বারা ছাত্র সমাজ ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে যা ভবিষ্যৎ তাদের নেতিবাচক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য শিক্ষাগত সামাজিক ও মূল্যবোধ গত কাজ কর্মের পরিবর্তে তারা অমানবিক ও অসামাজিক কাজকর্মের মধ্যে ঝুঁকে যাচ্ছে। তার মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রী ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকে তাদের নৈতিক চরিত্রকে কলুষিত করছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব শিক্ষা ও সমাজের ওপর এসে পড়ছে। প্রত্যেকদিন লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এই মোবাইল ফোনের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যাাও করছে। দিনে - দিনে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা সাইবার ক্রাইম এবং ফেক ও ফ্রডনেস বেড়ে চলছে। এর প্রভাব থেকে সমাজের অন্য শ্রেণীরাও মুক্ত নয় তবে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্র সমাজ নতুন শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী শিক্ষার সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও অগ্রগতি উদ্দেশ্য একেবারেই ব্যাহত হচ্ছে এই নতুন প্রজন্মের কাছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ছাড়া মানবজাতির উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব। সেই কারণে আমদের মন-মানসিকতাকে পরিবর্তন করার আবশ্যকতা রয়েছে। কারণ বিজ্ঞান ও দর্শন সমাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ l একে অপরের বিরোধী হলেও এই দুটি উপাদান সমাজের ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। এই দুটির মধ্যে একটি সহাবস্থান তৈরি করে মানবজাতির উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ ছাত্র সমাজকে বিজ্ঞান ও দর্শন, প্রযুক্তিবিদ্যা ও আধ্যাত্মিকতা , শিক্ষা ও মানবিকতা, মোবাইল ফোন ও আদর্শতার মধ্যে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে এবং পরিশেষে মানব জাতির রক্ষার দিকে সামগ্রিক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে l “জয় ছাত্র সমাজ, জয় শিক্ষা ব্যবস্থা, জয়।
লেখক:- অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহু (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ) শৈলজানন্দ- ফাল্গুনী স্মৃতি মহাবিদ্যালয়
খয়রাশোল, বীরভূম
সাক্ষাৎকার:- সেখ রিয়াজুদ্দিন, বীরভূম