নাটক আলোচনা
……


” চোপ ! আদালত চলছে “
ভ্রূণ হত্যা আর নারী জাতির অবমাননা এই নাটকে আলাদা
মাত্রা যোগ করেছে


ইন্দ্রজিৎ আইচ
………………………………………….
সংলাপ কলকাতা দীর্ঘ দিনের এক নাট্যদল। বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা মূলক নাটক তারা প্রযোজনা করেছে। আমাদের সমাজে মহিলারা এখন
ও অবহেলিত। আমরা যারা শিক্ষিত , মার্জিত , ভদ্র সভ্য মানবজাতি, এই আমাদের মধ্যে কোনো না কোনো সময় কুরুচি পূর্ন, নোংরা মানসিকতা প্রকাশ পেয়ে যায় এই সামাজিক বাতাবরণে। আর সেটা যদি হয় কোনো নারী কে কেন্দ্র করে সেটা
তখন সমাজের চোখে হয়ে ওঠে
এক মুখরোচক খাবারের মতন।

সংলাপ কলকাতা র নতুন নাটক
” চোপ ! আদালত চলছে ” এই নাটকে তার আভাস পাওয়া যায়।
বিজয় তেন্ডুলকার এর এই নাটক কে মঞ্চে উপস্থাপিত করেছে সংলাপ কলকাতা। কুন্তল মুখোপাধ্যায় এর অনুসৃজন ও নির্দেশনায় গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার একাডেমী মঞ্চে মঞ্চস্থ হলো।
সংক্ষেপে বলতে গেলে এই নাটকের বিষয়বস্ত হলো
সৃষ্টি একজন অবিবাহিত মেয়ে,
যার জীবন আর পাঁচটা মেয়ের মতন । সে যখন যুবতী খুব কম বয়সে ভালোবেসে ফেলে তার আপন মামা কে। আবার অন্য কাউকে। এই সমাজের কিছু কামুক পুরুষ সৃষ্টির সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ব্যবহারও করেছে । ঘটনা চক্রে সৃষ্টি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। সমাজে তার
দিকে আঙুল ওঠে। তার স্বামী কে? এই অবৈধ সন্তানের বাবা কে ? এক অদ্ভুত ভাবে নাটক টা এগিয়েছে। যদিও সবটাই কাল্পনিক। একটি ছোটো শহরে
মাত্র আট জন মিলে একটা নাট্য দল চালায় একটি গ্রুপ। তার অনুশীলন হয় একটি ছোটো বাড়িতে। সেখানে তারা একটি ঘরে কোর্ট রূপ সাজিয়ে নাটকের
মহড়া শুরু করে। সেই দল ঠিক করে এই নাটকের মূল ভিলেন হবে ” সৃষ্টি “। সেই নিয়েই এই নাটক। আদালতের কাঠগড়ায়
সৃষ্টির ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। এই সমাজ এখনও পুরুষ শাসিত সমাজ। সৃষ্টি নানা ভাবে বিভিন্ন সময় পুরুষদের কাছে শারীরিক, মানসিক ভাবে উৎপীড়িত হয়েছে। তাই সে তার গর্ভের সন্তান কে মেরে ফেলতে চেয়ে ছিলো। আদালত কক্ষে সে সুইসাইড করার চেষ্টা করে। সৃষ্টি চেয়েছিলো সমাজের আর পাঁচটা
মেয়ের মতন স্বামী – সন্তান নিয়ে ঘর সংসার করতে। কিন্তু না তার জীবনে সেটা ঘটেনি। প্রতিটা মুহূর্তে তার জীবনে নেমে এসেছে
অন্ধকার। যারা তাকে ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে আজ তারা আদালতে মিথ্যে সাক্ষী দিচ্ছে নিজেদের জীবনের আসল
সত্যি টা লুকোনোর জন্যে। এই হলো আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা।
এই নাটকে র মধ্যে দিয়ে সেই নারীর মনের ব্যাথা বেদনা, দুঃখ
কষ্ট সব প্রকাশ পেয়েছে….
যা শুধু সৃষ্টির জীবনে নয়, এই সমাজের সব নারীজাতির অপমান।
এক কথায় সব মিলিয়ে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের এই নতুন
নাটকটি সমাজ কে নতুন বার্তা এনে দেয়। এই নাটকে বেশ কিছু দৃশ্যে পরিচালক কুন্তল মুখোপাধ্যায় খুব সুন্দর ভাবে বেশ কয়েকটি মজার সংলাপ ব্যবহার করেছেন। যেমন শান্তি যার নাম( দাঙ্গা )কেন তার নাম দাঙ্গা?কারণ যে সময় তিনি জন্মে ছিলেন তখন চারদিকে দাঙ্গা চলছিলো। আবার আদালত চলতে চলতে অনেকের টয়লেট পেয়ে যায়, আবার কেউ পানের পিক ফেলতে যায় , আবার আরো মজার দৃশ্য বা সংলাপ হলো আদালতে শপথ বাক্য পাঠ করার সময় গীতার বদলে ডিক্সনারি নিয়ে আসা হয়েছে। এই দৃশ্যগুলি হল ভর্তি দর্শকদের মনে কমেডির সঞ্চার করে ।এবার আসি নাটকের কুশীলবদের কথায়।
শর্মিলা বসু(সৃষ্টি), কাজল শম্ভু(শান্তি),
গুরুপদ মিত্র ( সুখেন্দ্র), অমল আচার্য্য(শশাঙ্ক শেখর),
শান্তনু পাল(কার্তিক), সৌরভ পয়ড়া(রাজু), বিতান বিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়(কেশব দত্ত),
শিপ্রা পাল(বেনু), বাদল লাহিড়ী(পুলিশ অফিসার) সকলেই দারুন অভিনয় করেছেন। এই নাটকে
গৌতম ঘোষের আবহ মোটামুটি। সৌমেন চক্রবর্তী র আলো, সৌরভ এর মঞ্চ ও শর্মিলা বসুর পোশাক বেশ নজর কাড়া।
সংলাপ কলকাতা র
” চোপ! আদালত চলছে ” এই নতুন নাটকে এক নারির ভ্রূণ হত্যা থেকে তার কষ্ট, দুঃখ, কান্না,
সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় আর এই নাটক প্রশ্ন তোলে এই নারী জাতির অবমাননার জন্য কে বা কারা দায়ী ????

Leave a Reply