শীতের উষ্ণতা দিতে খরিদ্দারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন চায়ের ভাঁড়। ক্রেতাদের ভিড়ের মাঝেও চোখ এড়ায় না পথের ধারে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা ভিক্ষুকটিকে। অথবা স্বল্প পোশাকে কাঁপতে কাঁপতে হেঁটে যাওয়া কোনও দরিদ্র পথচারীকে। আর দেখতে পেলেই চায়ের কেটলি নামিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছেন তাঁর কাছে। এক ভাঁড় গরম চা তাঁর হাতে ধরিয়ে শীতবস্ত্র তুলে দিচ্ছেন গুসকরা শহরের এক সামান্য চা বিক্রেতা পাঞ্জাব শেখ।
সামান্য একটি চায়ের দোকান। ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। চায়ের দোকান থেকে যেটুকু আয় হয় তিনজনের সংসার কোনওরকমে চলে যায়। দোকান বন্ধ থাকলে সেদিন রোজগার পুরোপুরি বন্ধ। তবুও উপার্জনের টাকা জমিয়ে পথচলতি গরিব মানুষদের জন্য অকাতরে দান করতে ভুল হয় না পাঞ্জাব শেখের।
গুসকরা বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত দিকে রাস্তার ধারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান পাঞ্জাব শেখ। বাড়ি গুসকরা পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মুসলিমপাড়ায়। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী এবং এক কন্যা। মেয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করে ডি এড পড়ছেন।
জানা গিয়েছে গুসকরা বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত দিকে আগে একটি সাইকেল স্ট্যান্ড চালাতেন পাঞ্জাবের বাবা। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি। বাবার সঙ্গেই সাইকেল স্ট্যাণ্ডে থাকতেন। তারপর বাবার মৃত্যুর পর সাইকেল স্ট্যান্ড তুলে দিয়ে চায়ের দোকান খোলেন। পরে পরে পাশাপাশি আরও কয়েকটা চায়ের দোকান হয়েছে। দোকান থেকে যেটুকু আয় হয় তাতে সংসার মোটামুটি চলে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন এমনিতেই খুব মিশুকে এবং মিষ্টভাষী পাঞ্জাব শেখ। তাই তাঁর ভালই ভিড় হয়। দোকানে কোনও অসহায় ভিক্ষুক এলে বা দরিদ্র মানুষ কিছু সাহায্য চাইতে এলে তাঁদের ফেরান না পাঞ্জাব শেখ। আর এই শীতের মরশুমে নিজের টাকায় কেনা কম্বল বা শীতবস্ত্র তিনি দান করেন ওই অসহায় পরিচিত অপরিচিত মানুষদের।
পাঞ্জাব শেখ বলেন,” আমি নিজে ছোট থেকে দারিদ্র্যের মধ্যেই বড় হয়েছি। তাই গরিব মানুষদের কষ্ট বুঝি। বহু মানুষ নিজেদের কষ্টের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। তাই চেষ্টা করি তাদের জন্য সামান্য কিছু করার।” পাঞ্জাব শেখের কথায়,” ঈশ্বর যখন আমার পরিবারের জন্য জুগিয়ে দিচ্ছেন তখন আর পাঁচটা গরিব মানুষের জন্য একটু সহযোগিতা করতে ক্ষতি কি?”