চার্জশিট দাখিল নিয়ে ভূল তথ্য প্রদান আইসির, জেলে পাঠানোর হুশিয়ারি হাইকোর্টের 

মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু)

শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে এক মামলায় চার্জশিট প্রদানে তথ্য ভূল দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার আইসি কে জেলে পাঠানোর হুশিয়ারি দিলেন খোদ বিচারপতি। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে ভুল তথ্য দিলে তাকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে বলে এজলাসে এই হুশিয়ারি দেন বিচারপতি । আর এই ভুল তথ্য যদি কোনো পুলিশ আধিকারিক এর কাছ থেকে আসে তাহলে সে ক্ষেত্রে তাঁর জন্য নিয়ম কিছু পরিবর্তন হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়  । ‘পুলিশ’ বলে কখনই নিজের মনের মতন করা যাবে না । পুলিশকেও উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে কারাবাস দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে আদালত। আদালত সুত্রে প্রকাশ এদিন একটি মামলায় ওই থানার আইসি আদালতে ভুল তথ্য পেশ করে থাকেন।সম্প্রতি  নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার রায়নার বাসিন্দা সুরজ প্রতাপ নামে এক ব্যক্তি টাকা চাইতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন । আক্রান্ত ব্যক্তি  থানায় এসে অভিযোগ করেন যে তাকে গলা কেটে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে  থানায় তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ । এরপর সুবিচার চাইতে আক্রান্ত ব্যক্তি কলকাতা  হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে পুলিশ আদালত কে জানায়  -‘ এই মামলার  চার্জশিট জমা পড়ে গিয়েছে গত ৩১শে জানুয়ারি ‘।তবে  মামলাকারীর অভিযোগ , -‘ এই ঘটনায় কোনো চার্জশিট এখনও পর্যন্ত জমা পড়েনি। আদালতের কাছে পুলিশ মিথ্যে কথা বলছে’।এই মামলার  শুনানিতে যিনি সরকারি আইনজীবী ছিলেন তিনিও এজলাসে  বলেন -‘এই চার্জশিটের বিষয়টি পুলিশ তাকে জানিয়ে ছিল’ । সেই মত  পেয়ে তিনি আদালতে সওয়াল করেছেন বলে জানান ওই সরকারি আইনজীবী । এরপর  ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি । তিনি এজলাসে প্রশ্ন করেন, -‘ আদালতকে ভুল পথে পরিচালনা কেন করছে থানা? তাঁরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? থানার আইসি যে ভুল তথ্য আদালতে পেশ করেছে তার জন্য কি তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় তদন্ত হবে না’?  এই মামলার  পরবর্তী শুনানি ৬ই মে  হয়েছে।১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত আইসি কে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে যে -‘ কেন তাকে এই কাজের জন্য জেলে পাঠানো হবে না’। জানা গেছে, কয়েক মাস আগে টাকা চাইতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন  নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার রায়নার বাসিন্দা সুরজ প্রতাপ। সুরজের অভিযোগ, গলা কেটে তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়। এরপর স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন সুরজ। তাঁর দাবি, -‘ অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি’। এরপর হাইকোর্টে মামলা করেন সুরজ। এই মামলার শুনানিতে আদালতে পুলিশ এদিন জানায়, -‘ গত ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে চার্জশিট জমা হয়েছে’। অথচ মামলকারীর দাবি, -‘কোনও চার্জশিট জমা পড়েনি। পুলিশ মিথ্যা বলছে’। কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার  শুনানিতে সরকারি আইনজীবী জানান,-‘  চার্জশিটের বিষয়টি পুলিশই তাঁকে জানিয়েছে। সেই মতো তিনি সওয়াল করেছেন’। এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে জানান , ‘- কেন এভাবে আদালতকে ভুল পথে পরিচালনা করছে থানা? তারা কাদের সাহায্য করতে চাইছে? এই ঘটনায় কেন থানার আইসি-র বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে না তা জানতে চাইছে আদালত’।’ শুক্রবার ওই আইসি-কে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানার আইসি কে আদালত কে হলফনামা জমা দিয়ে জানাতে হবে – আদালত কে চার্জশিট প্রদান নিয়ে ভূল তথ্য দেওয়ার প্রকৃত কারণ কি? এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ৬ মে। 

Leave a Reply