ঘোলওয়ালী
অনন্য স্বাদে ভিন্ন পেশা । মগরাহাট বাজারে (দক্ষিণ ২৪ পরগনা ) ফুটপাথের এক ধারে এক ঘোলওয়ালীকে ঘোল বিক্রি করতে এখনো দেখা যায় । তিনি রবি ঠাকুরের অমলের দইওয়ালা নন । তিনি আমাদের মগরাহাটের ঘোলওয়ালী বলে পরিচিতা । পাশে বসে সাহায্য করেন তার স্বামী । স্বামী স্ত্রী মিলে ঘোষ দম্পতির দীর্ঘদিনের এই ব্যাবসা । প্রায় চলিশ বছর ধরে হবে জিঞ্জাসা করে জানতে পারি । এই ব্যাবসা তাদের পরম্পরা । শীত গ্ৰীষ্ম, বর্ষা বারো মাস তাদের এই ব্যাবসা । আগে ছিল মাটির কলসি । এখন স্টীলের হাড়ি । নারিকেলের মালা থেকে তৈরী ডাবুর খোল, হাতল কাঠের । প্রাচীনত্বের ছাপ এখনো আছে । দুটো হাড়ি বোঝাই ঘোল । অন্য হাড়িতে ধোয়ার জন্যে জল । কয়েকটা কাচের গ্লাস ,অবশ্য প্লাস্টিকেরও গ্লাস আছে । ঘোলের সঙ্গে ননী থাকে । ঘোলের বড় গ্লাস পনেরো টাকা , ছোটো গ্লাস দশ টাকা হবে । ছোটোবেলা থেকে যাতায়াতের পথে তাদের এই ঘোল বিক্রি দেখে আমরা অভ্যস্ত । চলতি পথে কখনো পথচারীদের ঘোল পান করতে দেখি । ঘোলের গ্লাসে একটু লবণ ,কখনওবা মুড়কি মিশিয়ে খেতে জিভে বেশ স্বাদ লাগে ,গরমকাল হলে তো আর কথা নেই !
আমি কয়েকবার কেটলি নিয়ে ঘোল আর ননী কিনে এনেছিলাম । তখন বোনের পক্স । ঘিয়ের মতো গায়ে ননী মাখিয়ে দিলে পক্সের তীব্র জ্বালা দূর হয় । ওই সময় শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য পক্স রোগীদের ঘোল পান করা জরুরি হয়ে ওঠে ।
আজ জরুরি প্রয়োজনে ঘোল কিনতে যাই । ঘোলওয়ালী ঠাকুরমার কাছে জানতে চাইলাম লক ডাউনে — ? প্রশ্ন সম্পূর্ণ করতে দিলেন না । ঘোলওয়ালী ঠাকুরমা বললেন লক ডাউনেও তার নাকি ঘোল বিক্রিতে ছাড় ছিলো । কেন ? বেচারা পুলিশরা ওই সময় কী কষ্ট করে ডিউটি করছিলেন । ওই গরমে কে তাদের ঘোল ,ননী খাওয়াবে । তাদের বাল বাচ্ছারা কী সঙ্গে থাকে । আপনি ভাগ্যবান দেখছি । আপনার পরে কে হাল ধরবে ? ওই দম্পতি খেদের সঙ্গে বললেন বন্ধ হয়ে যাবে । ঘোলওয়ালী ঠাকুরমা বললেন , ছেলেরা এতো কষ্ট করতে পারবে না ,বাবা । তারা ভোর বেলায় উঠতেই চায় না । সত্যি তো কষ্টের এবং সময় সাপেক্ষ । গরম দুধ ঠান্ডা করে মাটির কলসির ওই দুধে মিথুন দন্ড ( দুধ ফেনানোর জন্যে কাঠের তৈরী হাতের ওই ছোটো লাঠিকে মিথুন দন্ড বলে ) দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে মৈথূন করতে করতে ফেনা বাহির করতে হয় । ওই ফেনা ই হচ্ছে ননী । কোমরে, হাতে ট্যাঁশ লেগে যাবার উপক্রম । রস মেরে গুড় করার মতো কষ্টকর ব্যাপার । দুধ থেকে ননী বাহির হলে ঘোল হয় অর্থাৎ দুধ থেকে হয় ননী আর ঘোল যা আমরা বাজারে কিনে খাচ্ছি ।
এমন দূর্লভ পেশা কষ্টের, মজাদার হলে বা কী । জানি না এখানকার মতো অন্য কোথাও ঘোল বিক্রি হয় কিনা । মগরাহাটের পুলিশেরা খেয়েছেন । গোয়েন্দারা ও খেতে পারেন । তবে তারা এই ঘোল পান করলে ‘ঘোল’ খাবেন না বরং তাদের ব্রেন খুলে যেতে পারে যদি তারা অপরাধী ধরতে চান । এটা শর্ত নয় । ঘোলওয়ালী ঠাকুরমা এখানে একজনই আছেন । পরে কিন্ত তাকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না যদি কখনো তিনি অবসর নেন । তখন শুধু গল্প হবে । গল্পের জন্যে এ গল্প নয় । সত্যিই এমন পেশা দূর্লভ ,কষ্টের হলেও স্বাস্থ্যকর বটে । সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এমন পেশা যদি আর কোথাও থাকে টিঁকিয়ে রাখার জন্যে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্ৰহণ করুন ।
সুবল সরদার
মগরাহাট
দক্ষিণ ২৪ পরগনা