গুসকরায় রক্তদান শিবির,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,
চারদেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে নিজের বড় মায়ের জন্মদিন একটু অন্যভাবে পালন করলেন গুসকরা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌগত গুপ্ত। সৌজন্যে গুসকরা বিষাণ অ্যাথ্লেটিক ক্লাব। প্রসঙ্গত তিনি এই ক্লাবের সম্পাদক।
১৭ ই জুন সৌগত বাবুর বড় মেয়ে অদ্রিজার সপ্তম বার্ষিকী জন্মদিন। এতদিন চারদেওয়ালের মধ্যে থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে কেক কাটা সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান পালিত হতো। এবার তিনি কন্যার জন্মদিন পালন করলেন অভিনব পদ্ধতিতে। জন্মদিনেই আয়োজন করলেন এক স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের। পূর্বের মতই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ফেডারেশন অব ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশন অব ইণ্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখা।
গতানুগতিক প্যাণ্ডেল তৈরি করে বা হলঘর ভাড়া করে নয় রীতিমত ক্লাব অফিসের সামনে ভ্রাম্যমান বাতানুকূল বাসের মধ্যেই রক্ত সংগ্রহ করা হয়। গতবছর ঠিক একইভাবে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল।
রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে রক্ত দাতাদের মধ্যে উৎসাহ ছিল প্রচুর। গুসকরা ও তার আশপাশ এলাকা থেকে উৎসাহীরা রক্ত দিতে ছুটে আসে। শিবির থেকে প্রায় ৪৫ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। তবে বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকজন মানুষ রক্ত দিতে সুযোগ পাননি। রক্তদাতাদের মধ্যে ১৫ জনের বেশি মহিলা ছিলেন। বেশ কয়েকজন কলেজ ছাত্রীকেও রক্ত দিতে দ্যাখা যায়। রক্ত দিতে আসেন স্হানীয় একটি বেসরকারী ব্যাংকের দুই আধিকারিক দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য ও বিপ্লব হাজরা। দিব্যেন্দু বাবু বললেন- এই মহতী কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে খুব ভাল লাগছে। ছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত এক ক্যুরিয়ার সংস্হার কর্মী। মনে একটু চাপা ভয় থাকলেও প্রথমবারের জন্য রক্ত দান করে ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নসিফা বিবি খুব খুশি। তার বক্তব্য – আমার দেওয়া রক্তে যদি একজনেরও প্রাণ বাঁচে তার থেকে আনন্দের কি আছে? সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্হার হাতে তুলে দেওয়া হয়। ক্লাবের পক্ষ থেকে এটা নিয়ে তিনবার রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হলো। প্রতিটি রক্তদাতার হাতে স্মারক ও মানপত্র তুলে দেওয়া হয়। অতিথি আপ্যায়নে সক্রিয় ছিলেন সৌগত বাবুর পরিবারের সদস্যরা।
গুসকরা বিষাণ অ্যাথ্লেটিক ক্লাব এলাকায় মূলত ক্রিকেট খেলার আয়োজন বা কোচিং করানোর জন্য পরিচিত হলেও গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেদের নিযুক্ত করেছে। করোনার সময় খাদ্য বিতরণ বা উৎসবের সময় দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করতে তাদের বারবার দ্যাখা গ্যাছে।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন অবসারপ্রাপ্ত অধ্যাপক শিশির ঘোষ, বিশিষ্ট সমাজসেবী তপন মাজি, ক্লাব সভাপতি মহেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ সহ অন্যান্য সদস্যরা এবং বেশ কিছু স্হানীয় ব্যক্তিত্ব।
ক্লাব সম্পাদক তথা অদ্রিজার গর্বিত পিতা সৌগত বাবু বললেন – রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে গ্রীষ্মকালীন রক্ত সংকট দ্যাখা দিয়েছে। রক্তের অভাবে বহু মুমূর্ষু রুগী মরণাপন্ন হয়ে পড়ে। সেই জন্য আমরা এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছি। আজ আমার মেয়ের জন্মদিন। মেয়ের উপর যাতে সবার আশীর্বাদ বর্ষিত হয় তাই এই দিনেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিই। স্বেচ্ছায় রক্তদান করার জন্য তিনি ক্লাব ও পরিবারের পক্ষ থেকে রক্তদাতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গুসকরা তৃণমূল শহর সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন- এতো খুব ভাল খবর। যত বেশি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে তত ব্লাড ব্যাংকগুলির রক্তের অভাব মিটবে। দিনের শেষে লাভবান হবে মুমূর্ষু রুগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য তিনি ক্লাব সম্পাদক সহ অন্যান্য সদস্যদের অভিবাদন জানান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত আগামী ১৯ শে জুন পুরসভার পক্ষ থেকে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।