গুসকরায় চালু হলো ‘মা ক্যাণ্টিন’,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবশেষে গুসকরায় চালু হলো মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের আর এক প্রকল্প 'মা ক্যাণ্টিন'। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় এবং গুসকরা পৌরসভার উদ্যোগে ২৫ শে আগষ্ট দুপুর ১২ নাগাদ গুসকরা সাব রেজিস্ট্রারি অফিসের পাশে এই ক্যাণ্টিন চালু হলো। উদ্বোধন করলেন স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার। উপস্থিত ছিলেন গুসকরা পুরসভার বড়বাবু মধুসূদন পাল, মলয় চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক মদনমোহন চৌধুরী, পুর প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কুশল মুখার্জ্জী সহ সাধনা কোনার, যমুনা শিকারী, তৃণমূল আইটি সেলের রবিনাথ আঁকুরে এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আগত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, আপাতত দৈনিক এক'শ জন দুস্থ মানুষের জন্য এই ক্যাণ্টিন চালু করা হচ্ছে। এরজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সকাল ৯.৩০ মিনিটের মধ্যে পুরসভার নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে কুপন সংগ্রহ করতে হবে এবং এর বিনিময়ে প্রত্যেককে ডাল, সবজি, ডিম ও ভাত দেওয়া হবে। তবে প্রথম দিন সংখ্যাটা বেশি হলেও পরের দিন থেকে সংখ্যাটা একশত থাকবে। পরে আর্থিক সংগতি হলে সংখ্যাটা বাড়ানো হবে।
করোনা ভাইরাসের দাপটে কার্যত লকডাউন রাজ্য জুড়ে। নিষেধের বেড়াজালে পড়ে গোটা বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির বেহাল দশা। বহু মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি করোনা কেড়েছে অনেক মানুষের পেটের ভাত। সবচেয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয় দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের। কাজ হারিয়ে অনেকেই দু'বেলা দু'মুঠো ঠিক করে খেতে পারছে না। এই কঠিন পরিস্হিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী 'মা ক্যাণ্টিন' এর মাধ্যমে জেলায় জেলায় দুঃস্থ মানুষদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন পৌর এলাকায় এই ক্যাণ্টিন চালু হয়েও গেছে। দেরিতে হলেও গুসকরায় 'মা ক্যাণ্টিন' চালুর খবর শুনে অনেক দুস্থ মানুষ খুব খুশি। তাদের বক্তব্য - বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত একবেলা তো পেটপুরে খেতে পারব।
কিভাবে স্হানীয় বিধায়কের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং গুসকরা পৌরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সক্রিয় সহযোগিতায় 'মা ক্যাণ্টিন' চালু হলো সেটা গুসকরার পৌরসভার বড়বাবু উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে সবিস্তারে তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন - দুস্থ মানুষের স্বার্থে আমাদের ইচ্ছা এই 'মা ক্যাণ্টিন' এর পরিষেবা বছরের পর বছর ধরে চালু রাখা। এরজন্য তিনি সমস্ত সহৃদয় মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
ক্যাণ্টিন চালুর ব্যাপারে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার গুসকরাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং তিনি বলেন এই ক্যাণ্টিন মমতা ব্যানার্জ্জীর স্বপ্নের প্রকল্প। এরমাধ্যমে এলাকার দুস্থ মানুষরা মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে অন্তত একবেলা খেতে পাবে।
গুসকরা প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কুশল মুখার্জ্জী বললেন - আমাদের অভিভাবক অনুব্রত মণ্ডল ও বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের ঐকান্তিক চেষ্টায় গুসকরায় 'মা ক্যাণ্টিন' চালু হলো। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য গুসকরা পৌরসভা এলাকার দুস্থদের দিকে। এছাড়াও প্রতিদিন অনেক দুস্থ মানুষ গুসকরায় কাজের জন্য আসে। আমরা তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল থাকব। তবে প্রত্যেককেই নির্দিষ্ট সময়ে পৌরসভা থেকে পাঁচ টাকার বিনিময়ে কুপন কাটতে হবে।
রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্য করলেও এই প্রকল্পের জন্য প্রতি মাসে গুসকরা পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে বেশ কিছু অর্থ খরচ হবে। গুসকরার মত ছোট্ট একটা পুরসভার পক্ষে এটা যথেষ্ট চাপের হতে পারে এবং এরফলে পুরসভার পরিষেবা বা উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে -- এর উত্তরে বিধায়ক ও কুশল বাবু দু'জনেই আশ্বস্ত করে বলেন পুরসভার যা আয় হয় তাতে আশঙ্কার কিছু নাই। পুরবাসীদের পরিসেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তাছাড়া মাথার উপর রাজ্য সরকার তো আছেই।
মা ক্যাণ্টিনের খবর শুনে এলাকার বহু বিশিষ্ট মানুষ খুব খুশি। তারা চান - এই ক্যাণ্টিনের সুযোগ যেন প্রকৃত দুস্থরা পায়। তাদের আশঙ্কা দলীয় কাজে গুসকরায় এসে অনেক দলীয় কর্মী অথবা এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারী অন্যায়ভাবে এই ক্যাণ্টিনের সুযোগ নিতে পারে। তার জন্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। নাহলে অচিরেই মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।