খুকির গল্প
সোমা নায়ক (যাদবপুর)
সকাল, তবু ঘন আঁধার, রাত কি ফুরায়নি?
তাই বুঝি মা, খুকুর চিঠি সময়ে কুড়ায়নি!
নিয়ম করে নিত্য লেখে, খবরও আসে রোজ
আজ যে তবে অন্যথা তার, নেইকো মায়ের খোঁজ।
বাবার যুক্তি, মা কখনো ভোলে না খুকির কথা
ছোঁয়া দিয়ে যায় ঘুমের চোখে, চিঠিতে হাজার বার্তা।
ছোট্ট থেকে এ অভ্যাসে হয়নি পরিবর্তন
মা আসেনি? কোথায় বাবা? বড্ড জ্বালাতন!
রমলা মাসি, বাবা কই গো? খবর আছে খুব
মা আসেনি রাত্তিরে কাল, বাবাও দিল ডুব!
দেয়নি চিঠি, করেনি আদর, মা দিয়েছে ফাঁকি
এমন কেন? বাবার কাছে জবাব চাওয়া বাকি।
রমলা মাসি দুচোখ মোছে, হাসির চেষ্টা করে
বুকের মাঝে শক্ত করে খুকিকে জড়িয়ে ধরে।
নিষ্পাপ এই ফুলের মতো ছোটো মেয়েটারে
কি করে বলে, খুকি…বাবা কাল ফেরেনি ঘরে।
কি নাম যেন! ‘ডানা’ না ‘দানা’ কাল থেকে সেই শুরু
মুষলধারে বৃষ্টি, সাথে মেঘ ডাকে গুরু গুরু
তারই মাঝে খবর এলো, যেতে হবে, দরকারি
ডাক্তার হয়ে রুগীর ভাবনা, মাথায় মনে জারি।
মা হারা এই অবোধ মেয়ে, দেখারই বা আছে কে
কাজ কর্তব্য সবটা সামলে বাবাই আগলে রাখে
বাবা কোথায়? আসে না কেন? বাবাকেই আমি চাই
বাবা ছাড়া, মায়ের চিঠি কোথায় বলো পাই?
ইনিয়ে বিনিয়ে হাজার কথা, তবু কি মেয়ে ভোলে
সে খনেক খনেক ছুট্টে গিয়ে সদর দরজা খোলে।
হতাশ হয়ে ফিরে আসে, মাসিকে জড়ায় ভয়ে
বাবা কোথায় রমলা মাসি? সময় যে যায় বয়ে।
হঠাৎ বাজে ডোরবেলটা, সঙ্গে টোকা দরজায়
দাঁড়িয়ে বাবা, এক্সা ভিজে, ছেদ পড়লো খোঁজায়।
হাতের মুঠোয় মায়ের চিঠি, ছিনিয়ে নিল খুকি
বাবার চোখে আনন্দাশ্রু, লাগছে ভীষন সুখী।
কোথায় ছিলে বাবা তুমি? যাওনি কেন বলে?
মানছি আমি ঘুমিয়ে গেছি, জানাবে না তাই বলে!
চিন্তা হয় তো! বোঝো না কেন, মাও তো নেই কাছে
তুমি ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার কে আর আছে?
আমার বাবা, হিরো বাবা, আমার বাবা সেরা
আমার বাবা বলে না মিথ্যে, সত্যি দিয়ে ঘেরা।
আমার মা তো রোজই আসে, খেলাপ করে না কথার
রোজ চিঠি দেয়, আদর করে, ভালোবাসা হয় ব্যথার।