“কেন হাইকোর্ট বললো যোগ্য – অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব নয়? ” সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে চাকরি বাতিল মামলার দু দফায় শুনানি হলেও কোন রায়দান ঘটেনি। আগামী জানুয়ারি মাসে পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি চলে সুপ্রিম কোর্টে । শুনানি চলাকালীন অতিরিক্ত শূন্যপদ এবং ওএমআর শিট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার প্রশ্নের মুখে হয় রাজ্য এবং সিবিআইকে। এসএসসি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট এর আগে রায় দিয়েছিল ২০১৬ সালের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করা হবে। যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের আলাদা করার নির্দেশ দেবে শীর্ষ আদালত, তা জানতে উদ্গ্রীব সকলেই। এদিন সওয়াল জবাব মধ্যেই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার পর্যবেক্ষণ, “জানি না, ডাল মে কালা, ইয়া সব কুছ হি কালা হ্যায়।” ওএমআর শিটে রদলবদল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি।বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘এসএসসি পরীক্ষায় নম্বর কারচুপি হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার নম্বর অবৈধভাবে বাড়ানো হয়েছে’। রাজ্যের আইনজীবী কে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করেন, যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই পর্বে রাজ্যের কি সম্মতি রয়েছে? সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের আইনজীবী জানান, -‘যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাইয়ে তাঁদের সমর্থন রয়েছে’।প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “আমাকে বোঝান কেন হাইকোর্ট বলল (যোগ্য-অযোগ্য) আলাদা করা সম্ভব নয়?” কোন কোন ওএমআর শিটের তথ্য ক্যাপচার করে রাখা হয়েছে, জানতে চান প্রধান বিচারপতি। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের তৈরি সুপার নিউমেরারি পদ নিয়েও। প্রশ্নের মুখে সিবিআই তদন্তও।প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছিল কি না? কত দিনের মধ্যে নষ্ট করার নিয়ম রয়েছে। রাজ্য জানায়, -‘এক বছর পরে ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়। রাজ্য আরও জানায়, ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ সংরক্ষণ করে রেখেছে এসএসসি। তার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির রাজ্যের উদ্দেশে বলেন, কেউ ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করে রাখেনি। এসএসসি দায়িত্ব দিয়েছিল নাইসাকে। তারাও করেনি। নাইসা আবার স্ক্যানটেককে দায়িত্ব দেয়। তারাও সংরক্ষণ করেনি। স্ক্যানটেক স্ক্যান করেই ছেড়ে দিয়েছিল। এসএসসিকে দুষে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “কোনও টেন্ডার ছাড়াই নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিল এসএসসি। তারা কেন এমন করল স্পষ্ট নয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, অনেক কিছু গোপন করা হয়েছে। আসল এবং স্ক্যান ওএমআর শিট একই নয়। যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের বাছাই করতে মেটা ডেটা খুঁজে বার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি এও বলেন, ‘আমার তো চিন্তা হচ্ছে ফাঁকা ওএমআরসিট বদলে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে’। জানি না ডাল মে কালা হ্যায় ইয়া সব কুছ হি কালা হ্যায়সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে এসএসসির প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিলের মামলার শুনানি। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে চলছে শুনানি। আদালতে রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করছেন আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি জানান, ‘ এসএসসিতে নম্বরের কারচুপি হয়েছে ।শুধু তাই নয় লিখিত পরীক্ষায় বাড়ানো হয়েছে নম্বর।’সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না রাজ্যের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীর কাছে জানতে চান, যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বাছাই করতে রাজ্যের সম্মতি রয়েছে কি না। আর তাতেই সম্মতি জানিয়ে রাজ্যের আইনজীবী শীর্ষ আদালতে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাইয়ে তাঁদের সমর্থন রয়েছে।’ অন্যদিকে এসএসসি-র তরফে আইনজীবী জয়দীপ ঘোষও জানিয়েছেন, ‘ যোগ্য এবং অযোগ্য পৃথকীকরণ সম্ভব। ‘ তাতেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন হাই কোর্ট বলল যোগ্য-অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব নয়?’প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে ২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় দেয়। তার ফলে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যায়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সেখানে রাজ্য ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদও মামলা দায়ের করে। সেইসঙ্গে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশও।আগামী জানুয়ারি মাসে চাকরি বাতিল মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।