Spread the love

মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে

কেন্দ্র সাত হাজার কোটি টাকা না দিয়ে বাংলাকে  অবরোধ  করছে বলে অভিযোগ  সাংসদ সুদীপের

       খায়রুল   আনাম

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা টাকা কেন্দ্র মিটিয়ে দিচ্ছে না বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন  ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। সেই সাথে আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র না দেওয়ার ফলে অনেক প্রাপকেরই আবাস যোজনা প্রকল্পের বাড়ি অর্ধ নির্মিত  অবস্থায় পড়ে থাকার ফলে সেই সমস্ত পরিবারের মানুষজনদের নিদারুণ  দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।  একাধিক বার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ ব্যাপারে সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে   রাজ্যে এলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রাজ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জব কার্ডে দুর্নীতি হয়েছে  বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট  এনিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্তব্য করে যে, যাঁরা প্রকৃত জব কার্ডধারী এবং কাজ করেছেন৷ তাঁরা কেন প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবেন?  জব কার্ড দুর্নীতির তদন্তে  ১৮ জানুয়ারি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।  প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি  হিরণ্ময়  ভট্টাচার্যের  ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে,  ওই কমিটিতে  থাকবেন  কেন্দ্র, রাজ্য, সিএজি এবং অ্যাকাউণ্ট জেনারেলের  একজন করে প্রতিনিধি।  কেন্দ্র ও রাজ্যকে যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রতিনিধিদের নাম জানাতে হবে। সেই কমিটি আদালতকে তাদের রিপোর্ট  দেবে।  আগামী ২৫ জানুয়ারি  এই মামলার ফের শুনানির দিনও ধার্য হয়েছে।  দুই বিচারপতি তাঁদের মন্তব্যে  বলেছেন,  ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে যাতে নতুন করে কাজ চালু হয় তার জন্য  কেন্দ্র ও রাজ্যকে  সজাগ থাকতে হবে। যতই দুর্নীতি  হোক,  যাঁদের প্রকৃত কাজের দরকার  তাঁদের জন্য  কাজের সংস্থান করতে হবে। রাজ্য বা কেন্দ্র কাউকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।

    এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ১৯ জানুয়ারি তারাপীঠ মন্দিরে স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পুজো দিতে এসে সরাসরি মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের বরিষ্ঠ  সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি অভিযোগ করে বলেন,  লোকসভা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাকে ভাতে মারার  চেষ্টা করে যাবে  প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদীর  নেতৃত্বাধীন  বিজেপি সরকার। নির্মীয়মাণ রামমন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছেন, দেশের  শঙ্করাচার্যদের অভিমতকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ।  ধর্মের ব্যাপারটা ধর্মস্থানে থাকাই ভালো। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,  একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা রাজ্যকে না মেটানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছে রাজ্যের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য।  প্রধানমন্ত্রী  আবাস যোজনা, একশো দিনের কাজের টাকা ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।  এরমধ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পেই রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ  সাত হাজার কোটি টাকার  বেশি।  এরফলে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়তে  শুরু করেছে।  একশো দিনের কাজের প্রকল্প চালু না থাকায় রাজ্যের শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর আগে বকেয়া আদায়ের দাবিতে তৃণমূল কংগ্রেস ‘দিল্লি চলো’ অভিযানও করেছিলো। রাজ্যের প্রতিটি ব্লকেও এ নিয়ে কর্মসূচি  নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে বৈঠক করেন,  সেই বৈঠকে আমিও ছিলাম। সেই সময়  একশো দিনের কাজ-সহ রাজ্যের বকেয়া পাওনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনাও হয়। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র  মোদী বলেছিলেন,  কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা শীঘ্রই বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের পাওনার বিষয়টি সবিস্তার জেনেও নিয়েছিলেন। রাজ্যের বকেয়া টাকা  দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার জন্য  প্রধানমন্ত্রীকে বলাও হয়েছিলো। আলোচনা সদর্থক হয়েছিলো বলেই মনে হয়েছিলো। কিন্তু কেন্দ্র কোনও টাকা না দিয়ে বাংলাকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অবরোধ করার চেষ্টা করছে বলেই তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *