Spread the love

কলকাতা হাইকোর্টে হাওড়া পুরবিলে রাজ্যপালের সাক্ষর নিয়ে ‘ভূল’ স্বীকার এজির

মোল্লা জসিমউদ্দিন

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকার এবং বিচারপতি বিভাসরঞ্জন দের ডিভিশন বেঞ্চে ছিল হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত মামলার শুনানি। এদিন রাজ্যের পক্ষে এজি তাঁর আগের শুনানিতে দাবি করা রাজ্যপালের হয়ে যাওয়া সাক্ষর বিষয়টি নিয়ে ভূল স্বীকার করে নেন।অবিলম্বে হাওড়ার পুর নির্বাচন চেয়ে মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে । এই মামলার  শুনানি ছিল  বৃহস্পতিবার। এদিন।শুনানি শেষে কলকাতা হাইকোর্ট এর ডিভিশন বেঞ্চ  স্পষ্ট জানিয়ে দিল, -‘ যেহেতু এখনও রাজ্যপাল হাওড়া-বিলে সই করেননি, তাই ভোট নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকছেই’।হাওড়া-বিলে রাজ্যপালের সই ছাড়া পরবর্তী পদক্ষেপ করা যাবে না। পাশাপাশি, ভুল তথ্য পেশ করার কথা আদালতে স্বীকার করলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল  সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।আদালত সূত্রে প্রকাশ , বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি শম্পা সরকার ও বিচারপতি বিভাসরঞ্জন দে’র ডিভিশন বেঞ্চে পুরভোট-বিতর্কের  শুনানি হয়।এদিন আদালত কে , রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, -‘ রাজ্যপাল হাওড়া-বিলে সম্মতি দেননি’। পাশাপাশি এও জানান, -‘ তিনি ভুল তথ্য পেশ করেছিলেন’। রাজ্যপাল সই করেছিলেন বিলে এমনটাই জানিয়েছিলেন এজি। তবে, রাজ্যপাল সেই সই করেননি। সেকথা আজ কলকাতা হাইকোর্টে স্বীকার করে নেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। কেন ভুল তথ্য পেশ?  তা সবিস্তারে হলফনামা দিয়েই গোটা বিষয়টি তিনি আদালতে পেশ করবেন বলে জানা গেছে । এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৬ জানুয়ারি। সেদিন, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মূল মামলাটির শুনানি রয়েছে ।রাজ্যে আগামী ২২ জানুয়ারি যে চারটি পুরনিগম নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে সেখান থেকে কেন বাদ গেল হাওড়ার নাম এই মর্মেই মামলা দায়ের করেছিলেন মৌসুমী  রায়। পুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন তিনি। দ্রুত সেই মামলার শুনানি চাওয়া হয় মামলাকারীর তরফে। বৃহস্পতিবার  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকার ও বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে-র ডিভিশন বেঞ্চে মামলার  শুনানি হয়।গত সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন যখন চারটি পুরনিগমের ভোট ঘোষণা করে, তখন বালি হাওড়াকে বাদ রাখা হয়। গত সোমবার রাতেই পুরভোটের মামলাকারী মৌসুমী রায়ের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জরুরিভিত্তিতে একটি ইমেল করেন কলকাতা হাইকোর্টের  প্রধান বিচারপতি কে। তিনি সোমবার রাতেই শুনানির আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, যেখানে আদালতে ইতিমধ্যেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল পাঁচটি  টি পুরনিগমের নির্বাচন হবে, সেখানে আদালতকে জানানোর পরও কেন কমিশন চারটি পুরনিগমের নির্বাচন ঘোষণা করল? কেন সেই তালিকায় নেই হাওড়া পুরনিগমের নাম?পাশাপাশি মামলাকারীর আরও বক্তব্য, -‘  আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছিলেন, যে হাওড়া এবং বালি সংক্রান্ত বিলে রাজ্যপাল সই করেছেন। যদিও রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও হাওড়ার কোন বিলে সই করেননি’। কারা এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, সে নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে মামলা দায়ের করেন মৌসুমী রায়।যদিও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে রাতেই মামলাকারী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল –  রাতে জরুরিভিত্তিতে শুনানি সম্ভব নয়। তাঁকে সুনির্দিষ্টভাবে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করতে বলা হয়। প্রধান বিচারপতি বলে দেন, মামলা দায়েরের পরই হাইকোর্ট বিষয়টি শুনবে।চলতি সপ্তাহে  মঙ্গলবার সকালে মূল মামলাকারী মৌসুমী রায় মামলা দায়ের করেন।গত সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস।গত  মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় বিজ্ঞপ্তি। শিলিগুড়ি, বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগরে ভোট হচ্ছে ২২ জানুয়ারি। কিন্তু সেই তালিকায় ছিল না হাওড়া পুরনিগমের নাম। কারণ বিল-বিতর্ক। গত শুক্রবার, হাইকোর্ট কে  রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, হাওড়া পুরসভার বিলে সই করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাই হাওড়া পুরভোটে কোনও বাধা নেই। তবে শনিবার সকালেই টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। স্পষ্ট তিনি টুইটে জানান, হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত বিল এখনও তাঁর বিবেচনাধীন। পাশাপাশি এও জানান, হাওড়া-বিলে তিনি সই করেননি।। এমনকী, হাওড়া পুরবিল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য চেয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু, তার কোনও উত্তর আসেনি বলেই অভিযোগ করেন তিনি। হাওড়ার ভোট নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিল প্রথম থেকে। কারণ, এতদিন হাওড়া পুরসভার অধীনেই ছিল বালি পুরসভা। বালি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে হাওড়ার মোট ওয়ার্ড ছিল ৬৬টি। গত ১২ নভেম্বর বালি কে আলাদা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা অধিবেশনে বিল আনা হয়। ‘মাইক্রো লেভেলে নাগরিক পরিষেবা’ পৌঁছে দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়। কিন্তু বিল পাশ করানো হলেও রাজ্যপালের সই ছাড়া তা আইনে পরিণত করা সম্ভব নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।এদিকে সংশোধনী বিল পাশ হলে তার পরে আইন করে বালি পুরসভা আলাদা হবে। বালিকে ধরে হাওড়ায় মোট ৬৬টি ওয়ার্ড। বালি আলাদা হলে সেখান থেকে ১৬টি ওয়ার্ড বাদ যাবে। বাকি ৫০টি ওয়ার্ড নিয়ে হাওড়া পুরসভা হবে। কিন্তু যখন ভোটের কথা বলা হয়েছিল তখন হাওড়া ৬৬টি ওয়ার্ডের কথা বলা ছিল। এ নিয়েও একটা জটিলতা থেকেই গিয়েছে। রাজ্যপালের সই না হলে আপাতত থমকে হাওড়া বালি পুরসভার ভোট বলে আইনমহল মনে করছে। আগামী ৬ জানুয়ারী এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *