Spread the love

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে বিদেশী অতিথিদের উপস্থিতি নজর কাড়ল

সৌরভ দত্ত, কলকাতা :বাঙালির বারো মাসে যদি তেরো পার্বণ হয়, তাহলে চোদ্দ নম্বর পার্বণ হিসেবে নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের নামোল্লেখ করা যায়।বুধবার ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হল ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহ। একঝাঁক তারকা সমাবেশে সূচনা হল সিনেমার উৎসবের। উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনায় ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দীক্ষামঞ্জরী’। ৪ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। নন্দন সহ শহরের ২০টি প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে দেশ-বিদেশের একাধিক সিনেমা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শত্রুঘ্ন সিনহা এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে হল অনুষ্ঠানের প্রদীপ প্রজ্বলন।
২১টি দেশের ১৭৫ টি সিনেমা দেখানো হবে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফোকাস কান্ট্রি ফ্রান্স। এ বারের ফেস্টিভালের চেয়ারপার্সন গৌতম ঘোষ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, দেব, দুলাল লাহিড়ীর মতো অভিনেতারা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের মঞ্চে। উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয় তপন সিংহের পরিচালিত সিনেমা ‘গল্প হলেও সত্যি’।
ফেস্টিভাল সম্পর্কে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘এই নিয়ে তৃতীয়বার আমি ফেস্টিভালে এলাম। প্রতি বছর আমায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি আপ্লুত। এই সুন্দর মুহূর্ত আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায় বারবার।’
একেবারে বাংলায় নমস্কার দিয়ে শুরু করলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। বললেন, ‘আমি পাটনার লোক। তাও বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করছি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। মমতাময়ী, আয়রন লেডি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। স্মরণ করলেন ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়কে। একটা ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেল, যে মানিকদার সঙ্গে কাজ করতে পারলাম না। কথা হয়েও কাজ হয়নি।’
বাংলার সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগের কথা উল্লেখ করে শত্রুঘ্নর সংযোজন, ‘মঞ্চে রয়েছেন আমার বন্ধু ও গুরু গৌতম ঘোষ। কাজ করার আনন্দ পেয়েছি, সেই সঙ্গে প্রচুর শিখেছি। ‘অন্তর্জলী যাত্রা’য় কাজ করতে পেরেছি ওঁর সঙ্গে। যা আমার হৃদয়ে থেকে যাবে আজীবন।’ প্রশংসায় ভরালেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, দেবকেও। কলকাতার দুর্গাপুজো থেকে বাংলা ভাষার প্রশংসাও শোনা গেল তাঁর মুখে। বললেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই এবং ওঁর জন্যই এই ভাষা বিশ্বের দরবারে বিপুল মর্যাদা পেয়েছে। যাই হয়ে যাক, আমি সব সময় আপনাদের ছিলাম, আপনাদের আছি, আপনাদের থাকব।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উত্তরীয় পরিয়ে ও পুষ্পস্তবকের মাধ্যমে অতিথিদের বরণ করে নিলেন টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতারা। শত্রুঘ্ন সিনহা ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বরণ করে নিলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বরণ করলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায়কে। রুক্মিণী মৈত্র বরণ করে নিলেন রঞ্জিত মল্লিক ও দীপঙ্কর দে-কে। চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ও সব্যসাচী চক্রবর্তীকে সম্মান জানান কৌশানী মুখোপাধ্যায়।
মঞ্চে ‘টেক্কা’ স্মৃতি উসকে দিয়ে সৃজিতকে সংবর্ধনা জানালেন দেব। প্রিয় ‘দিদি’র ডাকে সাড়া দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির টেলিপর্দার একঝাঁক তারকাও। ‘থালি গার্ল’-এর ভূমিকায় তৃণা সাহা। গৌতম ঘোষ ও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বনি সেনগুপ্ত। দেব ও যিশু সেনগুপ্তকে উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।উপস্থিত ছিলেন মুনমুন সেন, দুলাল লাহিড়ী, শতাব্দী রায়, পাওলি দাম, দেবলীনা কুমার, শ্রীতমা, সৌমিতৃষা কুণ্ডু-সহ আরও অনেকে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত। এদিন ছিলেন আর্জেন্টিনার পরিচালক পাভলো ও ফোকাস কান্ট্রি ফ্রান্সের পাশাপাশি আর্জেন্টিনা, ইরানের সিনে ব্যক্তিত্বরাও।
মঞ্চে উপস্থিত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “টলিউডের শিল্পী, কলাকুশলীদের দক্ষতা কোনও অংশে কম নয়। বাংলায় প্রচুর ভালো ভালো লোকেশনও রয়েছে। সেগুলো আন্তর্জাতিক সিনেমহলও তুলে ধরুক। পাহাড়-সমুদ্র, জঙ্গল প্রকৃতির সবরকম প্রাচুর্যে পূর্ণ আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। আপনাদের সিনেমায় আমাদের বাংলার এই বিভিন্ন লোকেশন দেখান। বাংলার সঙ্গে কাজ করুন। বাংলা এগিয়ে চলুক বিশ্ব পানে।”
কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জলের’ বন্দনা করে আন্তর্জাতিক সিনেমহলকে পশ্চিমবঙ্গে আসার আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, এই বিশ্ব একটি পরিবার। সিনেমার কোনও বাউন্ডারি নেই। ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে সিনেমাই এক করে বিশ্বকে। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়েই বললেন, বলিউড-হলিউডকেও হার মানিয়ে দেয় টলিউড। একদিন আসবে যেদিন বিশ্ব সিনেমার মানচিত্রে জ্বলজ্বল করবে বাংলা। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলিউড তারকাদের দেখা না গেলেও জাঁকজমক কোনও অংশে কমেনি। পরিচালক তপন সিংহের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে “শতবর্ষে তপন সিংহ” বইটির মোড়ক উন্মোচন হয় ও এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের বোসিওর প্রকাশিত হয়।
নিজস্ব চিত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *