কবিপ্রণামে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি

পারিজাত মোল্লা,

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি তাদের রথীন্দ্রমঞ্চ প্রেক্ষাগৃহে মহাসমারোহে পালন করল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৫ তম জন্মদিবস। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কবিগুরুর প্রতি প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে গত ২১ থেকে ২৪শে মে এই চারদিন ধরে চলে রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী উৎসব। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ববর্গের উজ্জ্বল উপস্থিতি, তাঁদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতাদানে, বিশ্বকবি রচিত গান কবিতা পরিবেশনে এবং রবীন্দ্রনৃত্য পরিবেশনায় প্রতিটি সন্ধ্যা হয়ে ওঠে মনোজ্ঞ উৎসবমুখর। আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ম্যাক্সিম ভি. কোজলভ, রাশিয়ান কনসাল জেনারেল কলকাতা, ড. স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ, অধিকর্তা, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইন্সটিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ কলকাতা, শ্রী সুখেন্দু শেখর রায়, সাংসদ রাজ্যসভা, সাহিত্যিক শ্রী অরিত্র সরকার, বিচারপতি শ্রী শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়, উপাচার্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক শান্তা দত্ত (দে), উপাচার্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রমুখ। সোসাইটির তরফে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, সভাপতি, ড. সুজিত কুমার বসু, কার্যকরী সভাপতি, সহ-সভাপতিদ্বয় অনিন্দ্য কুমার মিত্র ও বিচারপতি সৌমিত্র পাল, সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, কোষাধ্যক্ষ শ্রী গৌরাঙ্গ মিত্র, রঞ্জিত কুমার নায়ক, সহ-সম্পাদক, কর্মসমিতির সদস্য ভাস্কর চন্দ্র চন্দ্র, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ধীমান দাশ। প্রতি সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মাননা জ্ঞাপনের পর স্বাগত ভাষণ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। অসামান্য বাগ্মীতায় এক একজন বক্তা তুলে ধরেন রবীন্দ্রজীবন ও কর্মের এক একটি দিক। প্রথম দিনে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সাহিত্য পত্রিকা “সাহিত্য পত্র” র আটত্রিশ তম সংখ্যাটি আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয় মঞ্চে এবং আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথি সহ প্রত্যেক শিল্পীর হাতে পত্রিকাটি তুলে দেন সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। কবিপ্রণামে এককভাবে মঞ্চে অংশগ্রহণ করার জন্য এবারে অডিশনের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়েছে সেরা একঝাঁক নবীন সংগীত ও বাচিক শিল্পী এবং তাদের মঞ্চে পরিবেশনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দিনে সমবেত নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন নৃত্যাঙ্গন সঙ্গীত একাডেমী, সমবেত আবৃত্তি পরিবেশনায় ভোরের পাখি, কবিতা ঘর (বীরভূম), কথা ও কাহিনী (দুর্গাপুর), স্বর ও শ্রুতি সংস্থা (মধ্যমগ্রাম), সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনায় আনন্দধারা (সল্টলেক), সুর ও শিল্প সঙ্গীত একাডেমী (চুঁচুড়া), ধ্রুবক (মুর্শিদাবাদ)। একক পরিবেশনায় বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীগণ ছিলেন শ্রেয়া গুহঠাকুরতা, দেবাশীস রায়চৌধুরী, মাধবী দত্ত, অ্যারিনা মুখার্জী, পর্ণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, অস্মিতা কর, ড. তানিয়া দাস, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, পূবালী দেবনাথ, ডা. অংশু সেন, পিয়ালী বসু, শিঞ্জিনী আচার্য্য মজুমদার, অনুশীলা বসু, অজন্তা চক্রবর্তী, স্বাগতালক্ষ্মী দাসগুপ্ত, অদিতি গুপ্ত, জয়ন্তী সরেন, আরাত্রিকা সিনহা, গৌতম মিত্র, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য, দেবারতি সোম, নীপবীথি ঘোষ, দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়, হিমাদ্রী মুখোপাধ্যায়, সৌমিত রায়। একক আবৃত্তিতে ছিলেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, দেবাশিস বসু, কাজল সুর, সুকুমার ঘোষ, মধুমিতা বসু, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, স্বপন গাঙ্গুলী, তরুণ চক্রবর্তী, ঈশিতা দাস অধিকারী, স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুছন্দা তরফদার, মুরারী মুখার্জী, শোভন সুন্দর বসু, দেবযানী বসু কুমার, প্রবীর ব্রহ্মচারী, সুহৃদ দাস প্রমুখ। উৎসবের শেষদিন শেষলগ্নে ছিল রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির শিল্পীদের পরিবেশনায় কবিগুরু রচিত ‘শাপমোচন’ নৃত্যনাট্য। সংগীত পরিচালনায় শিপ্রা বসু, নৃত্য পরিচালনায় কৌশিক ঘোষ। এই চার দিনে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শুভদীপ দে, চন্দ্রিকা ব্যানার্জী, চন্দ্রজিৎ প্রামাণিক, মৌ গুহ, সায়ন্তী ব্যানার্জী, অভিষেক রায়, সলিল সরকার ও রঞ্জনা কর্মকার। শ্রোতাদর্শক পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে প্রতিদিনের আয়োজন হয়ে ওঠে রুচিপূর্ণ শ্রুতিমধুর আনন্দমুখর। সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সংগীত গেয়ে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী পালন উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

Leave a Reply