ওড়িশায় পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রেপ্তার না আটক? হলফনামা তলব ডিভিশন বেঞ্চের

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হলো যে, -‘ বাংলার কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়নি, শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য তাদের আটক করা হয়েছিল’।  কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে ওড়িশা সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বাংলার মুখ্যসচিব ওড়িশার মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখেছিলেন, যা দুই রাজ্যের মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছিল।ওড়িশার অ্যাডভোকেট জেনারেল পীতাম্বর আচার্য কলকাতা হাই কোর্টে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে -‘আটককৃতদের বিরুদ্ধে কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়নি এবং তারা সকলেই নিরাপদ আছেন। বাঙালিরা তাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধু, তাই এই বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। মূলত মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে ওড়িশায় আটক করা হয়েছিল, যাদের পরিবার তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না’।বাংলার কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়নি। ভারতের নাগরিক কি না? সেই সন্দেহ দূর করতেই আটক করা হয়েছিল। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে এমনই জানাল ওড়িশা সরকার। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, -‘ ওই বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে ওড়িশা সরকারকে হলফনামা দিতে হবে’। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ”ওড়িশার এজি মুখে যা বলেছেন, তা হলফনামা আকারে আদালতে জানাতে হবে।” আগামী ২৮ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি।রাজ্যের তরফে এদিন সওয়াল করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্দেশে ওড়িশার এজিপি আচার্য বলেন, “বাঙালিরা আমাদের ভাই, প্রতিবেশী। আমাদের বিরুদ্ধে এসব বলে বিভ্রান্ত করবেন না। আমাদের প্রধান বিচারপতি বাংলা থেকে এসেছেন। এখানে বাঙালি-অবাঙালি বিষয় নয়। এদেশের নাগরিক কি না, সেটা যাচাই করা হচ্ছে।”তখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন করেন, “তাহলে জানান, কতজন তামিল কতজন গুজরাটিকে গ্রেফতার করেছেন? বাঙালিদের বেছে বেছেই, কেন যাচাই করা হচ্ছে?” ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি তখন এজিপি আচার্যর কাছে জানতে চান, “গ্রেফতার না আটক, তা আদালতে জানাতে হবে।” এজি বলেন, “কোনও গ্রেফতার হয়নি। ফরেনার্স আইন অনুযায়ী, যাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ, যাচাই করা হচ্ছে তথ্য। এটা আইন অনুযায়ী ভেরিফিকেশন।” আইনজীবী কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হঠাৎ করে কেউ বিদেশি হয়ে গেল? ওড়িশা সরকার কীসের ভিত্তিতে এদের সন্দেহ করল? ৪০০ জন বাঙালিকে গ্রেফতার করা হয়েছে?”ওড়িশার এজি তখন বলেন, “বাঙালি-অবাঙালি বলে বিভ্রান্ত করবেন না। দেশের ব্যাপার। পুরীতে আসুন নিমন্ত্রণ রইল।” আগামী ২৯ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিনই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রেফতার না আটক করা হয়েছে, তা বিস্তারিত হলফনামা আকারে জমা করবে ওড়িশা সরকার।সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, বাংলাদেশি বলে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিককে ওড়িশায় আটকে রাখা হয়। সেই ঘটনা নিয়েই হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেই বিষয়েই হলফনামা  চাইলো হাইকোর্ট। 

Leave a Reply