‘এসএসসির নিয়োগ পরীক্ষায় চিহ্নিত অযোগ্যরা বসতে পারবে না’, সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রাখলো ডিভিশন বেঞ্চ

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল -‘নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না অযোগ্যরা’। এদিন সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রেখে জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। অযোগ্যরা ফর্ম ফিলাপ করলে সেই আবেদন বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। এসএসসি যে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেখানে কোনভাবেই চিহ্নিত অযোগ্যরা আর পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।স্পষ্টভাবেই এদিন জানিয়ে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে হাইকোর্টে ফের ধাক্কা খেল রাজ্যন সরকার এবং এসএসসি । ‘কোনও চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবে না। যদি আবেদন করে থাকেন সেই আবেদন পত্র বাতিল করতে হবে’। গত সোমবার এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য ও এসএসসি। সেই রায়ের ক্ষেত্রেই ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, -‘চিহ্নিত অযোগ্যরা কোনওভাবেই এই চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। কোনো চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থী আবেদন জমা করলে , সেই আবেদন বাতিল করতে হবে’।কোনওভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের জন্য এই পরীক্ষা নয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়েতেও তেমনই স্পষ্ট বার্তা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। এই রায় প্রত্যাশিত বলেই জানিয়েছে তাঁরা। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাতে সকলে অংশ নিতে পারে, তার জন্য ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য ও এসএসসি। একাধিক যুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই যুক্তি খারিজ হয়ে গিয়েছে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ।এসএসসির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য যে রায় দিয়েছিলেন, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে রাজ্য এবং এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন)।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৫ হাজার ৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। তাঁরা সকলেই ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেলভুক্ত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য শিক্ষা দফতর। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, এসএসসি-র ২০২৫-এর ওই বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী।ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় গত সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের নির্দেশ, -‘কোনও ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থী যদি ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন, সেই আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে’।হাইকোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, -‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে’। একই সঙ্গে গত ৩০ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল এসএসসি, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। বিজ্ঞপ্তির বাকি অংশে আদালত হস্তক্ষেপ করেনি। সে ব্যাপারে শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা ১৭ জুলাই। কলকাতা হাইকোর্টে নিজেদের অবস্থান জানায় রাজ্য এবং এসএসসি। বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও বলা নেই যে নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন না। রাজ্যের আরও যুক্তি ছিল, ‘অযোগ্য’দের চাকরি গিয়েছে। বেতন ফেরত দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই শাস্তির পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়াটা আরও এক শাস্তি। তাই এসএসসি ও রাজ্যের আইনজীবীর সওয়াল, একই অপরাধের জন্য কাউকে দু’বার শাস্তি দেওয়া যায় না।যদিও এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়নি রাজ্যের উচ্চ আদালত। সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ”কমিশনের কাছ থেকে এই ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত নয়।” তার পরেই হাইকোর্ট জানায়, শুধু ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’দের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। তাতে আবার রাজ্য ও এসএসসি সন্তুষ্ট না হওয়ায় ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হয়। সেই মামলার রায়েই স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হল একক বেঞ্চের নির্দেশ বহাল থাকবে। কোনও চিহ্নিত অযোগ্যই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।

Leave a Reply