এত সহজে জামিন দিলে সমাজে কি বার্তা যাবে? পার্থের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এই মামলায় অনেকেই ইতিমধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তবে পার্থের জামিনের প্রশ্নে বারবার উঠে এসেছে প্রভাবশালীর তত্ব। বুধবার মামলার শুনানিতে তাঁকে কার্যত ভর্ৎসনা করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট । বাকিদের সঙ্গে তিনি যাতে নিজের তুলনা না করেন, সেই বিষয়ে সতর্ক করে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা।এদিন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, -‘ পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি সত্যিই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এত সহজে জামিন পাওয়া সম্ভব নয়’।এদিন মামলার শুনানি হলেও রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছেন বিচারপতিরা। যাঁর বিরুদ্ধে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে এত সহজে জামিন দিলে সমাজে কী বার্তা যাবে? তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। যদিও পার্থের আইনজীবী মুকুল রোহতাগি জানিয়েছেন , -‘ তাঁর মক্কেলের বাড়ি থেকে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি। বরং টাকার পাহাড় মিলিছে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে’। এ প্রসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, -পার্থ নিজে দুর্নীতি না করে, তিনি হয়তো ‘ডামি’ সামনে রেখে দুর্নীতি করেছেন’। আদালত সাফ জানিয়েছে, -‘তদন্তের অগ্রগতির পরেই জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা যাবে’।সুপ্রিম কোর্টে পার্থের প্রশ্ন ছিল, ”অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য-সহ অনেকেই জামিন পেয়েছেন, তাহলে আমাকে দেওয়া পাব না?” এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বলেন, ”বাকিরা আর আপনি সমান নন।” পার্থের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতির বলেন, -‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অন্যদের তুলনা করা যাবে না। কারণ তাঁদের সকলের অবস্থান এক নয়। যে সময় নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে, সেই সময়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ। অন্য কোউ নন। তাই বাকিদের সঙ্গে তুলনা করার আগে ওঁর লজ্জিত হওয়া উচিত’। পার্থের আইনজীবী বলেন, -‘ প্রয়োজনে জামিন পেলে পার্থ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকবেন। কিন্তু আড়াই বছর ধরে একটা লোক জেলবন্দি এটা কী ধরণের রসিকতা?’ একথা শুনে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন,- ‘আপনার মক্কেলর কাছ থেকে কোটি কোটি নগদ উদ্ধার হয়েছে। উনি একজন দুর্নীতিবাজ। এই ধরণের দুর্নীতিবাজকে মুক্তি দিলে সমাজে কী প্রভাব পড়বে তা বিবেচনা করতে হবে।’তিনি বলেন, ‘একজন মন্ত্রী হয়েও একাধিক লাভজনক সংস্থায় যুক্ত ছিলেন। তাঁর ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মালিকানাধীন সংস্থান নামে সম্পত্তি কেনা হয়েছে। তিনি ভুয়ো সংস্থা খুলে তাতে ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ করেছেন। উনি খুব ভালো করে জানতেন যে তিনিই নিজেই মন্ত্রী। তাই এর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আর আরও নেই। আর তিনি নিজে তো নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেবেন না। আদালত ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় এই সব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।’এদিন কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়-‘, গোটা মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা খতিয়ে দেখে জামিনের ব্যাপারে বিবেচনা করা হোক’। সুপ্রিম কোর্টের এহেন কঠোর অবস্থানে কলকাতা হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালতে পার্থের জামিন মামলা আরও কঠিন হয়ে পড়লো বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।