একাংশ আইনজীবী হেনস্থা ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানালো -‘ রায় পছন্দ না হলে উচ্চতর আদালতে যান’
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
গত শুক্রবারের সন্ধেবেলার অশান্তি ঘটনার রেশ পড়লো সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে।একাধারে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ‘বার এসোসিয়েশনে’র একাংশের তরফে দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে উক্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ। সেইসাথে কলকাতা হাইকোর্টের বড় অংশের আইনজীবীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন।সুপার নিউমারারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে নুতন করে রাজ্য কে লিখিত আবেদন জানাবার নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও আইনজীবী ফিরদৌস শামিমকে হেনস্থার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের কাছে আর্জি বারের সদস্যদের। মামলা গ্রহণ প্রধান বিচারপতির।এই ধরনের ঘটনায় বার এসোসিয়েশন আতঙ্কিত। ১৪৪ ধারা সত্বেও আইনজীবীদের প্রশ্ন, “তাহলে কীভাবে সেখানে এরা জড়ো হল?”বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা সওয়াল করেন, “পুলিশ দর্শকের মতো দেখছিল। পুলিশ কমিশনারের রিপোর্ট তলব করুক। বিচার ব্যবস্থাকে বার বার টার্গেট করা হচ্ছে।”আইনজীবীরা আদালতে প্রশ্ন তোলেন, “ওনারা চার ঘণ্টা ধরে ওখানে কী করছিলেন? বিচারপতির ছবি মারিয়ে দেওয়ার ঘটনা হয়েছে।” এদিন প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “যদি তাঁদের রায় পছন্দ না হয়, তাহলে উচ্চতর আদালতে আবেদন করা উচিৎ। এভাবে বিক্ষোভ দেখানো যায় না! এটা প্রাথমিকভাবে ভুল। তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা বিষয়টি গ্রহণ করছি।” উল্লেখ্য, গত শুক্রবার হাইকোর্ট চত্বরেই বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিম। তাঁদের বিরুদ্ধে স্লোগানও ওঠে। সুপার নিউমেরারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলায় দ্রুত রায় দেওয়া হচ্ছে না কেন এই প্রশ্ন তুলে বিচারপতিদের বিরুদ্ধেও ওঠে স্লোগান। আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় ঘেরারও করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, আইনজীবীদের লক্ষ্য করে বোতল ছোড়ার চেষ্টা চলে, উন্মত্ত আচরণের পাশাপাশি গালিগালাজও করা হয়। এবার সেই ঘটনার জল গড়াল হাইকোর্টে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এজলাসে জানান “এটা সহ্য করা যায় না,”।কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বারের বাইরে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের সুপারনিউমেরারি পদ নিয়ে নির্দেশের পরেও উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগ মামলার কোনও অগ্রগতি হয়নি হাইকোর্টে। এমনকি বিচারপতির সঙ্গে বিকাশের ‘আঁতাঁতের’ কথাও বলা হয়।সেই ঘটনাতেই সোমবার আইনজীবী ফিরদৌস শামীম, কল্লোল বসু এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ক্রিমিনাল কন্টেম্পট অর্থাৎ অপরাধমূলক মামলা দায়ের করার আবেদন করেন বিচারপতি বসুর এজলাসে। তখনই বিচারপতি বলেন, “এমন ঘটনা একেবারেই সহ্য করা যায় না।” যেহেতু প্রধান বিচারপতি বিষয়টা দেখছেন, তাই মঙ্গলবার ফের আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।”শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষার বিষয়ে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগে মামলা গড়িয়েছিল হাইকোর্টে। ওই মামলায় শুক্রবার রাজ্যের স্পষ্ট লিখিত বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। মামলার গত শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর পর্যবেক্ষণ, -‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো সিবিআই তদন্ত হচ্ছে না, ঠিক আছে। কিন্তু অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির যে সিদ্ধান্ত, সেটা কাদের জন্য?’ মৌখিক নয়, লিখিতভাবে রাজ্যকে কারণ জানাতে বলে আদালত। তারপরই ঝামেলার সুত্রপাত। সেদিনের বিক্ষোভের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করেন বিকাশরঞ্জন। তিনি জানিয়েছেন , -“আবার প্রমাণিত হয়েছে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা নেই। যারা লড়াই করে আইন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাসকদল দুর্নীতির পক্ষে যাঁরা আছেন তাঁদের লেলিয়ে দিচ্ছে।” এই ঘটনা ঘিরে কলকাতা হাইকোর্ট পাড়ায় তীব্র চাঞ্চল্য রয়েছে।