Spread the love

‘ইডি কি কোন মামলা ইচ্ছে করলেই ভিন রাজ্যে নিয়ে যেতে পারে?’ অনুব্রত মামলায় প্রশ্ন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

টানা এক বছরের বেশি সময়কাল জেল হেফাজতে রয়েছেন বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল। প্রথম পর্বে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল জেল পরবর্তীতে দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি তিনি।তিনি শুধু একাই নন, তাঁর সাথে রয়েছেন তাঁর মেয়ে এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলার রাশ এখন ইডির হাতে।আসানসোল আদালত, কলকাতা হাইকোর্ট, দিল্লির রাউস এভিনিউ আদালত, দিল্লি হাইকোর্ট সর্বপরি সুপ্রিম কোর্টে বারবার উঠেছে অনুব্রত মামলা। তবে শনিবার আসানসোল আদালতে সওয়াল-জবাবে খানিকটা স্বস্তির মুখে অনুব্রত!গরু পাচার মামলা দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডির তোড়জোড় আবার ধাক্কা খেল আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বার বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেন সংক্রান্ত মামলায় আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল ইডি।অনুব্রত মণ্ডলের শুনানির দ্বিতীয়দিনে সিবিআই আদালতে আবারও ধাক্কা খেল ইডি। দু’সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর  পর্যন্ত ঝুলে রইল গরুপাচার মামলার দিল্লিতে স্থানান্তরের শুনানি।১৯ জুলাইয়ের পর ২ আগস্ট। এবারও গরুপাচার মামলাকে দিল্লিতে স্থানান্তর করার যে আরজি জানিয়েছে ইডি, এক্ষেত্রে তাদের এক্তিয়ার নিয়ে আসানসোল সিবিআই এজলাসের বিচারকের প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারলেন না ইডির আইনজীবী অভিজিত ভদ্র।আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর প্রশ্নের মুখে পড়লেন ইডির আইনজীবী। এদিন বিচারক বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরেন তাঁর সামনে। এদিন সওয়াল-জবাব পর্বটি ছিল ঠিক এইরকম। বিচারক: -‘ সিবিআই এই মামলায় যা বাজেয়াপ্ত করেছে সেটা আর আপনারা যার ভিত্তিতে ইসিআই করেছেন সেগুলো কি এক?’ইডির আইনজীবী: -‘না, আমরা কেবল আর্থিক দুর্নীতির দিকটা দেখছি’।বিচারক: -‘আইনের কোথায় লেখা আছে যে অর্থনৈতিক দুর্নীতির তদন্ত একমাত্র ইডিই করতে পারে?’ তবে আর্থিক দুর্নীতির একাধিক ধারা উল্লেখ করে ইডির আইনজীবী বিচারককে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর যুক্তিতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিচারক।শনিবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সিবিআই এজলাসের বিচারক বারবার বলেন, ‘আইন অবশ্যই আছে। না হলে সারা দেশে এত তদন্ত কী করে হচ্ছে? সাজা কীভাবে ঘোষণা হচ্ছে? সেই আইনের তথ্যই দেখতে চাইছি। কোনও গেজেট, কোনও নোটিফিকেশন থাকলে দেখান।’ কিন্তু ইডির আইনজীবী এদিনও বিচারকের কাছে সদুত্তর দিতে পারেননি। ইডির আইনজীবী সঠিক যুক্তি খুঁজে পেতে সময় চেয়ে উচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন।যার  ফলে শনিবার দু’দফায় ঘন্টা দেড়েকের সময় ধরে ইডির আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি হয়। কিন্তু ইডির আইনজীবী ব্যর্থ হন। এদিন বিচারক স্পষ্ট বলেন, ‘এখানে সেন্ট্রাল এজেন্সির ডিরেক্টর, ডেপুটি ডিরেক্টর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের কথা উল্লেখ থাকলেও ইডি অর্থাত্‍ এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট উল্লেখ নেই।’ শেষ পর্যন্ত বিচারক ইডির আইনজীবীকে আরও সময় দেন। তিনি এদিন নির্দেশ দিয়ে বলেন, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। গত ২৮ জুলাই আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ইডির তরফে মামলা স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছিল।গরু পাচার মামলায় প্রথমে সিবিআই ও ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন দিল্লির তিহার জেলেবন্দি অনুব্রত, তাঁর কন্যা, প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল, এনামুল হক এবং বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার।  আদালত সুত্রে প্রকাশ, আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত থেকে মামলা দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। এদিন তার দ্বিতীয় দিনের শুনানি ছিল।’ ইডির আইনজীবী বিচারকের করা প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।কেন এই মামলা আসানসোল থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যেতে চান? বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এই প্রশ্নের মুখে পড়েন ইডির আইনজীবী অভিজিত্‍ ভদ্র। বিচারক জানতে চান, -‘ কোন আইনে এবং কে এই মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অধিকার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়েছে’।শনিবার গরু পাচার সংক্রান্ত মামলায় ইডিকে বিচারকের প্রশ্ন, ”কোনও মামলা কি ইচ্ছে করলেই যে কোনও কেন্দ্রীয় এজেন্সি, যে কোনও রাজ্যের আদালতে নিয়ে যেতে পারে?” সিবিআই এজলাস আরও বলে, ”পিএমএলএ বা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের মামলা যে ইডি করবে, তার সরকারি নির্দেশ বা গেজেট নোটিফিকেশন কি ইডির কাছে আছে?” ইডির আইনজীবী অভিজিত্‍ ভদ্র আইনের একাধিক ধারার উল্লেখ করে আবেদনের পক্ষে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন। এর বিরোধিতা করেন অনুব্রতের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু এবং আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ।প্রসঙ্গত,  গরু পাচার মামলায় এখন তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রত এবং সহগল। একই মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। এ ছাড়া আগেই গ্রেফতার হন এনামুল হক এবং বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার। গত ২৮ জুলাই আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ইডির তরফে ৪৪(১/সি) নম্বর ধারায় এই মামলা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করে ইডি। দুই দফায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে ইডির আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি হয়। কিন্তু গত ১৯ অগস্টের মতো শনিবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সেই আবেদনের দ্বিতীয় শুনানির দিনেও কার্যত ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা  ইডি। ১৯ অগস্টের মতো শনিবারও আসানসোলে সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক ইডির বেশ কিছু প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষজনক কিছু পায়নি। শেষ পর্যন্ত বিচারক ইডির আইনজীবীকে আরও সময় দেন। দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে বিচারক জানান, -‘ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর’। এখন দেখার পরবর্তী শুনানিতে ইডি আসানসোল সিবিআই এজলাসের বিচারকের প্রশ্নমালার উত্তর কতখানি দিতে পারে? 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *