আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরতর, জানালো ডিভিশন বেঞ্চ
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে -‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ঘোষ ও অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। এই ধরনের দুর্নীতি প্রশাসনের অভ্যন্তরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে’।এরফলে মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করছে আদালত। আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় উষ্মা প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সন্দীপ-সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। একজন অধ্যক্ষের আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগকে গুরুতর বলল ডিভিশন বেঞ্চ ।মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “সন্দীপ ঘোষ-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর।”এদিন মামলার শুনানিতে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “এই ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকলে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে। এই ধরনের দুর্নীতি স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে দূষিত করে।” এই ধরনের মামলায় কেন দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার, তাও বলেন বিচারপতি। তিনি বলেন, “এই ধরনের ক্ষেত্রে আইন মেনে দ্রুত বিচার সংগঠিত করতে পারলে সাধারণ মানুষের মনে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ে।” মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “যদি কোনও সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ ওঠে, তাহলে দ্রুত তাঁর অভিযোগমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।” বিচারপতি নির্দেশ দেন, – ‘বুধবারের মধ্যে সমস্ত নথির স্ক্যান করা কপি অভিযুক্তদের দেবে সিবিআই। সেই নথি যাচাই করে নিম্ন আদালতে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারবেন অভিযুক্তরা’।এদিন সন্দীপের আইনজীবী বিচারপতিকে অনুরোধ করেন, -‘দুর্নীতি সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ যেন বাদ দেওয়া হয়’। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী জানান , -‘দুটি বিষয়ে আদালত সতর্ক। প্রথমত, সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে দ্রুত তাঁকে অভিযোগমুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক অভিযুক্তকেই তাঁর বক্তব্য পেশ করতে দিতে হবে’। আগামী মঙ্গলবার হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘ঘনিষ্ঠ’দের টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছেন এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার নামে আর্থিক অনিয়ম করেছেন। এই অভিযোগ প্রথম প্রকাশ্যে আনেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। এরপর তিনি ইডি এবং সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।মঙ্গলবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানিতে সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে, -‘বুধবারের মধ্যে বাকি নথিগুলি অভিযুক্তদের দিতে হবে’। সন্দীপ ঘোষদের আইনজীবী আদালতে জানান, -‘৪৬২টি নথির মধ্যে তাঁরা মাত্র ২১৬টি নথি পেয়েছেন’। হাইকোর্ট জানিয়েছে, -‘দ্রুত বিচার হলে জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে’।আরজি কর দুর্নীতি মামলায় প্রথমে গ্রেফতার হয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষ। টানা কয়েকদিন সিবিআই দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরপর মামলার সূত্র ধরে বিপ্লব সিংহ, আফসার আলি, সুমন হাজরা এবং সর্বশেষে আশিস পাণ্ডেকেও গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সকল অভিযুক্ত জেলবন্দি রয়েছেন।এই মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বিচারপতি বাগচীর মতে, এই মামলা শুধু আরজি কর নয়, সামগ্রিক প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টিকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যেই সিবিআই-কে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে এবং অভিযুক্তরা নিজেদের বক্তব্য নিম্ন আদালতে জানাতে পারবেন।