আরজিকর হাসপাতালে ওই ঘটনা ধর্ষণ না গণধর্ষণ? সিবিআইয়ের কাছে জানতে চাইলো হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
সোমবার সুপ্রিম নির্দেশ মেনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে উঠে আরজিকর মামলা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুন এবং ধর্ষণ কাণ্ডে এবার কলকাতা হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। আরজি কর হাসপাতালের ওই ঘটনা ধর্ষণ না কি গণধর্ষণ ছিল? তা সিবিআই-এর কাছে তা জানতে চেয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। মামলার কেস ডায়েরিও তলব করেছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।সিবিআই তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে আরজি কর মামলায় নতুন করে তদন্তের আর্জি জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার।সুপ্রিম কোর্টের অনুমতির পর সোমবার সেই মামলারই শুনানি শুরু হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী শামিম আহমেদ এবং সুদীপ্ত মৈত্র সওয়ালে জানান, ‘সিসিটিভি ফুটেজ নেই, তদন্তে অনেক ফাঁকও রয়েছে।’ সিবিআই-এর পরবর্তী তদন্তে আদালত যাতে নজরদারি চালায়, সেই আর্জিও জানানো হয় নির্যাতিতার পরিবারের তরফে। তদন্ত সঠিক না হলে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ যাতে আদালত দেয়, সেই আর্জিও জানানো হয় ওই পরিবারের তরফে। এদিন এই মামলার শুনানি শুরু হতেই সিবিআই-এর আইনজীবীকে মূলত তিনটি প্রশ্ন করেন বিচারপতি ঘোষ। তিনি জানতে চান, -‘ আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে নির্যাতনের ঘটনা ধর্ষণ না কি গণধর্ষণ ছিল? মূল অভিযুক্ত একজন না কি একাধিক ব্যক্তি ছিলেন? মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের শাস্তি ঘোষণার পর সিবিআই তদন্ত আর কতটা এগিয়েছে? তার সর্বশেষ অগ্রগতি কী সেই প্রশ্নেরও উত্তর চান বিচারপতি ঘোষ। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭০ নম্বর ধারা অনুযায়ী তদন্ত হয়েছে কি না? সেই প্রশ্নও তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই প্রশ্নগুলি করার পাশাপাশি মামলার কেস ডায়েরিও তলব করেছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, -‘আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিলে রাজ্য সরকারের আপত্তি নেই’। অন্যান্য মামলায় সিবিআই সক্রিয় হলেও আরজি কর মামলায় তদন্তের গতি ধীর কেন? সেই প্রশ্নও তোলেন কল্যাণ। তিনি আরও বলেন, ‘সিবিআইকে ১৫ দিনের সময়সীমা দিয়ে তদন্ত গোটাতে নির্দেশ জারি করুক আদালত। প্রায় ১ বছর তদন্ত করছে সিবিআই, কী পেল তারা? রাজ্যের মানুষ জানতে চায়, দেশ জানতে চায়।’সিবিআই-এর পক্ষ থেকে এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার। তিনি জানান, -‘ আগামী শুক্রবার আদালতে কেস ডায়েরি পেশ করবে সিবিআই’। আরজি কর মামলায় সিবিআই তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা ও চিকিৎসকরা। নির্যাতিতার বাবা-মা একাধিকবার দাবি করেছেন এই ঘটনায় সঞ্জয় রায় রায় একা দোষী নন। আরও অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিতে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, সোমবার আরজি কর মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। তিলোত্তমার বাবা আদালতে বলেন, “আমাদের ৫৪ টা প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। আদালতের কাছে আমরা সেই ৫৪ টা প্রশ্ন রেখেছি, তার উত্তর পেতে চাই।এদিনের শুনানিতে কিছুটা আশ্বস্ত হলেন নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, -‘মনে হচ্ছে কিছুটা বিচারের দিকে এগোচ্ছে। সিবিআইকে আমরা বোঝাতে পারিনি, এটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন। এটা ধর্ষণের মোটিভ ছিল না, খুন করাই ছিল মোটিভ। হাসপাতালে জাল ওষুধের দুর্নীতি সে জেনে ফেলেছিল, এত রোগীর মৃত্যু প্রতিবাদ করেছিল, তাই খুন করা হয়েছে’। আগামী শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।