ডাক্তারদের অভিযোগ শুনবে টাস্ক ফোর্স,
আরজিকর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি ১৭ মার্চ
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে আরজিকর সংক্রান্ত মামলা। গত ৭ নভেম্বর শেষ আরজি কর মামলার শুনানি হয়েছিল।সুপ্রিম কোর্টের নব প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে এদিন প্রথম আরজি কর মামলার শুনানি হয়।এদিন মামলার শুনানিতে আরজি কর কান্ডে প্রধান বিচারপতি বলেন – “শিয়ালদহ কোর্টে যদি বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, তা হলে মামলাটি পরবর্তী শুনানির আগে শুনবে আদালত”। এর পাশাপাশি পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের যা দাবি দাওয়া ছিল সেই নিয়ে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সকে রিপোর্ট দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ রাজ্যের উপর নজরদারিতে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এনটিএফের কাছে অভিযোগ জানাতে বলেন জুনিয়র ডাক্তারদের। নিম্ন আদালতে আরজিকর কান্ডে বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ জন সাক্ষীর।সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেন শীর্ষ আদালতে। এটি সিবিআইয়ের সপ্তম রিপোর্ট।সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোজ নিম্ন আদালতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ধর্ষণ মামলার শুনানি হচ্ছে। সেই শুনানি প্রক্রিয়া আগামী মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে মোট ৫২ জন সাক্ষী আছেন। রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ জনের বয়ান।অন্যদিকে আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীর আর্জি জানান, দ্রুত বিচার দেওয়া হোক। তিনি আশাবাদী আগামী সপ্তাহের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হয়ে যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ১৭ মার্চ। নিম্ন আদালতে এই মামলায় মোট সাক্ষী ৫১ জন। তার মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। বাকি গুলিও শীঘ্রই শেষ হবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই ট্রায়াল চলছে। সিবিআইয়ের তরফে যে তদন্ত চলছে তা মূলত তিনটি পথে চলছে, খুন ও ধর্ষণের মূল মামলা, তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও আর্থিক দুর্নীতি। এই প্রেক্ষিতেই শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “ডিএনএ রিপোর্ট করা হয়েছে? রিপোর্ট কোথায়?” জবাবে তুষার মেহতা বলেন, “রিপোর্ট ম্যাচ করেছে।”পাশাপাশি আরজি কর আর্থিক দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে কি না? তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, -‘অন্য কোর্টে এই বিষয়ে মামলা চলছে’। একইসঙ্গে রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “দুই অভিযুক্ত সরকারি পদে কাজ করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।” যদিও সিবিআইয়ের দাবি মানেননি রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই।’ প্রতুত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ২৭ নভেম্বর সরকারি পদে কাজ করা দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রাজ্যের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ২৯ নভেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়।এছাড়া এদিনের শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী অনুরোধ জানান, রাজ্যের পদক্ষেপের উপর নজরদারি করতে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হোক। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি জানান, -‘আপনাদের যা বলার ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের কাছে বলুন। টাস্ক ফোর্সকে আমরা নির্দেশ দিতে পারি’। এ বিষয়ে একটি ইমেল আইডি চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয় ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সকে। সেখানে যাবতীয় অভিযোগ জানাতে পারবেন চিকিৎসকরা। সব খতিয়ে দেখে ১২ সপ্তাহ পরে রিপোর্ট দেবে টাস্ক ফোর্স।একইসঙ্গে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেন, “ওই সংক্রান্ত মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। তাই ওই আবেদনটির শুনানি হবে না।” এর পরই শীর্ষ আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৭ মার্চ হবে বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।