আরজিকর ধর্ষণ – খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়, আজ যাবজ্জীবন না ফাঁসি? 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

শনিবার শিয়ালদহ আদালতে আরজিকর ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত আসামি সঞ্জয় রায়। এদিন বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে বহু প্রতীক্ষিত এই মামলার অভিযুক্ত কে দোষী সাব্যস্ত করা  হয়। এদিন সঞ্জয়কে কাঠগড়ায় তুলে বিচারক জানিয়ে দেন, -‘  অভিযুক্ত কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের জন্য মৃত্যু), ১০৩(১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়।’বিচারকের কথা শুনে সঞ্জয় চিৎকার করে ওঠে। সে দাবি করে, “আমি কিছু করিনি। যারা করেছে তাদের কেন ছাড়া হল? আমার কোনও দোষ নেই। সবাই মিলে করেছে। আমি পাপ করিনি। দোষ করলে গলার রুদ্রাক্ষের মালা খুলে পড়ে যেত।” বিচারক জানিয়ে দেন, -‘ সোমবার এই মামলার সাজা ঘোষণা। সেদিন সঞ্জয়কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে’।এদিন বাংলা পক্ষের সমর্থকরা সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।নির্যাতিতার পরিবারের ৫ সদস্য আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তবে সাধারণ মানুষকে আদালত কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মেয়ের নৃশংস হত্যার ১৬২ দিনের মাথায় সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিচারককে ধন্যবাদ জানান অনেকেই। উল্লেখ্য,  গত বছরের ৯ আগস্ট, হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয় তাঁকে। তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। ১০ আগস্ট এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১২ আগস্ট নির্যাতিতার বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। শোকস্তব্ধ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। গত ১৩ আগস্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।গত ১৪ আগস্ট ‘রাতদখল’ করেন  প্রতিবাদী মহিলারা। ওই রাতেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। গত ১৮ আগস্ট এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়। গত ২ এবং ৩ সেপ্টেম্বর জুনিয়র চিকিৎসকরা লালবাজার অভিযান করেন। ১০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকরা অবস্থান আন্দোলন শুরু করেন। ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকের ডাক দেন। তবে দুদিনই বৈঠক ভেস্তে যায়।১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্বাস্থ্যভবনে চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে আচমকা পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর সিপি বিনীত গোয়েলকে সরানো হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান প্রত্যাহার করেন। আর জি কর আন্দোলনের মাঝে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাগর দত্ত হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের উপর হামলা করা হয়। মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু হয়। স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ, নিরাপত্তা-সহ একাধিক দাবিতে গত ৫ অক্টোবর ধর্মতলায় অনশন আন্দোলন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।গত ৭ অক্টোবর মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম উল্লেখ করে সিবিআই চার্জশিট পেশ করে আদালতে। গত ১৯ অক্টোবর মুখ্যসচিবের মাধ্যমে অনশনকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের ফের বৈঠক হয়। অনশনকারীরা তাঁর লাইভ সম্প্রচার দেখেন। বৈঠকের পর ওইদিনই অনশন প্রত্যাহার করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। গত ৪ নভেম্বর সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ফাঁসি নাকি যাবজ্জীবন, কী সাজা হয় সেদিকে নজর সকলের। এদিন বিচারক সঞ্জয়কে জানিয়ে দেন, -‘সঞ্জয় যা করেছে, তার জন্য সর্বনিম্ন সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। হতে পারে মৃত্যুদণ্ডও’।দোষী সাব্যস্ত করা ধারা গুলি একটু বিস্তারিত জানা যাক।বিএনএস ৬৪ নম্বর ধারা: ধর্ষণের জন্য বিএনএস-এর এই ধারা রয়েছে। এই ধারায় ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ১০ বছরের কম কারাদণ্ড হবে না। সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। সঙ্গে ধার্য করা হতে পারে জরিমানা।বিএনএস ৬৬ নম্বর ধারা: ভারতীয় ন্যায় সংহিতার এই ধারায় বলা হয়েছে, ধর্ষণের কারণে যদি নির্যাতিতার মৃত্যু হয় বা নির্যাতিতা অসাড় হয়ে রয়ে যান, তাহলে দোষী ব্যক্তির কারাদণ্ড হবে। সেই ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সাজা হবে ২০ বছরের জেল। সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে আমৃত্যু কারাদণ্ড।বিএনএস ১০৩ (১) নম্বর ধারা: এই ধারায় মূলত খুনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। খুনের দোষ প্রমাণিত হলে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সোমবার অর্থাৎ আজ এই মামলার রায়দান হতে পারে। 

Leave a Reply