আরজিকর কান্ডে রাজ্য – সিবিআইয়ের আবেদনে রায়দান স্থগিত কলকাতা হাইকোর্টে
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
আরজিকর কান্ডে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকার ও সিবিআই উভয়ই মামলা দাখিল করেছে আসামি সঞ্জয় রায় কে ফাঁসি দেওয়ার জন্য। এদিন এই মামলায় অংশ নেয় নিহতের পরিবারও। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে । তাতে তিলোত্তমার পরিবার জানিয়ে দেয়, তারা সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা চায় না।তিলোত্তমার বাবা-মা এদিন এজলাসে স্পষ্ট করে দেন, -‘ রাজ্যের করা এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা কতটা, তা নিয়ে তাঁদের কিছু বলার নেই। কিন্তু তাঁরা এই মুহূর্তে সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা চাইছেন না। আপাতত এই মামলা গৃহীত হলে, তারপর তাঁরা বাকিটা বলবেন’। তিলোত্তমার বাবা-মা আগেও জানিয়েছিলেন, -‘রাজ্য সরকারের তদন্তে তাঁদের ভরসা নেই’। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য প্রমাণ লোপাটেরও অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা। সেই পরিস্থিতি রাজ্য সঞ্জয়ের ফাঁসি চায় কি চায় না, সে ব্যাপারে তাঁরা একদমই আগ্রহী নন। প্রসঙ্গত, সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে রাজ্যের করা মামলার আদৌ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে কিনা? কলকাতা হাইকোর্টে সেই বিষয়টির ওপরেই শুনানি চলে। এদিনের সওয়াল জবাবের একেবারে শেষ মুহূর্তে বিচারপতি তিলোত্তমার বাবা-মায়ের কাছে জানতে চান, তাঁরা কী চাইছেন? তখনই তাঁরা আদালতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, -‘তাঁরা সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইছেন না’।এদিন সিবিআই-এর তরফ থেকেও জোর সওয়াল করা হয়, -‘ রাজ্য সরকারের এই মামলা করার কোনও এক্তিয়ার নেই’। অ্যাডিশন্যাল সলিসেটর জেনারেল এসভি রাজুও ছিলেন এই মামলায়। সিবিআই-এর তরফ থেকে এদিন সওয়াল করা হয়, -‘আদালত যাবতীয় রেকর্ড সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছিল। তদন্ত ট্রায়াল কোন কিছুতেই রাজ্যের ভূমিকা ছিল না। তদন্তে রাজ্যকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আদালত চাইলে আদালত বান্ধব নিযুক্ত করতে পারে’। আপাতত এই মামলায় শুনানি শেষ, রায়দান স্থগিত।হাইকোর্টের বাইরে দাঁড়িয়েই তিলোত্তমার বাবা বলেন, “কেন আমরা সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইছি না, সেটা আমাদের আইনজীবী স্পষ্ট করে দেবেন। এখনও পর্যন্ত এই মামলার বিষয়ে আমাদেরকে রাজ্যের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। কে কী পিটিশন করেছে, সেটাও জানি না। সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে এসেছি। কী হয় কোর্টে সেটা নিয়ে টেনশনে আছি। আমরা চাইছে, এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তাদের সবাইকে সামনে আনা হোক, এটাই চাইছি। আমরা হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চে ৫৫টা প্রশ্ন রেখেছি।” উল্লেখ্য, এই মামলায় তিলোত্তমার বাবা-মায়ের আইনজীবী বলেন, “এই মামলাটা করেছে রাজ্য। অ্যাপিলটা করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের দাবি জানিয়েছেন, তখন নিম্ন আদালতের বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তদন্ত নিয়ে। আমরাও দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরাও বলেছি, যারা মূল অপরাধী তারা এখনও ধরা পড়েনি। আমরা বলছি, এই মুহূর্তে এই অ্যাপিলে আমরা ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট চাই না। আমরা চাই যারা মূল অপরাধী তারা ধরা পড়ুক, তাদের কড়া সাজা হোক।”রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।আরজি কর-কাণ্ডে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিম্ন আদালত। তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এরপরই রাজ্য এবং সিবিআই সঞ্জয়ের ফাঁসির শাস্তি দাবিতে পৃথক ভাবে হাইকোর্টে মামলা করেছে। শুধুমাত্র সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চায় না বলে জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। সওয়াল-জবাবে নির্যাতিতার আইনজীবী জানান ,-‘ কন্যাহারা পরিবার চায় না যে দোষীর মৃত্যুদণ্ড হোক। তাঁদের দাবি, প্রকৃত অপরাধীর এখন বাইরে ঘুরছে। তাকে খুঁজে বার করে তদন্তের আওতায় আনা হোক’। আদালতের বাইরে নির্যাতিতার বাবা বলেন,-‘ একা সঞ্জয় নন, যাঁরা যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা সবাই সামনে আসুক। সবাইকে চরম শাস্তি দেওয়া হোক। তাই এই মামলায় সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড চাই না। রাজ্য পুলিশ আমাদের ভরসা ভেঙেছে। সিবিআই তদন্ত করতে পারেনি। আদালতের উপর আমাদের ভরসা আছে। আমার মেয়ের জন্য যারা বিচার আনতে পারবে তাদের উপর আমাদের আস্থা-ভরসা থাকবে’। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে জানা গেছে। গত ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল শিয়ালদহ আদালত। ২০ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয় রায়কে সর্বোচ্চ ফাঁসির শাস্তি দেয়নি। যাব্বজীবন কারাদণ্ড নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছিলেন, সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত। কিন্তু এটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা নয়। তাই মৃত্যুদণ্ড দেননি তিনি। আমৃত্যু সঞ্জয়কে কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালত। এই রায়ের বিরোধীতা করে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য। পরে হাইকোর্টে রাজ্যের মামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সিবিআই। রাজ্যের এই মামলা করার এক্তিয়ার আছে কি না? জানতে চায় তারা। তারপর সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সিবিআই। এদিন শুনানি হয় জোড়া মামলার।তবে রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে।