‘একই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি ভিন্ন আদালতে শুনানি চলতে পারেনা’,
আরজিকর কান্ডে নুতন করে আবেদন জানাবার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
এবার আরজিকর মামলায় নির্যাতিতার পরিবার কে একই বিষয়ে দুটি ভিন্ন আদালতে মামলা দাখিল নিয়ে প্রশ্ন তুললো দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের উচ্চ আদালত অর্থাৎ কলকাতা হাইকোর্টে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আরজিকর কান্ডে নুতন করে তদন্ত চেয়ে আসল দোষীদের খুঁজে বের করার যে আবেদন রেখেছে নির্যাতিতার পরিবার। সেই আবেদন নিয়ে বুধবার প্রশ্ন তুললো সুপ্রিম কোর্ট। বেছে নিতে বললো যে কোন একটি আদালত কে।আরজিকর মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা নির্যাতিতার পরিবারের। তদন্তকারীদের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে নির্যাতিতার পরিবার যে মামলা দায়ের করেছিল সেই আবেদন প্রত্যাহার করে নতুন করে আবেদন করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আরজি কর-কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। সেই একই আবেদন নিয়ে কেন সুপ্রিম কোর্টেও শুনানি হবে? এদিন শুনানিতে এমন প্রশ্নই তুললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। তিনি বলেন , ‘একই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু’টি আদালতে শুনানি চলতে পারে না।হয় উচ্চ আদালত শুনবে, নয় তো শীর্ষ আদালত’। নির্যাতিতার মা-বাবা কোথায় শুনানি চাইছেন, তা তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সেই মতো পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।শিয়ালদহ আদালত আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার রায় দেওয়ার আগে কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা। সিবিআই তদন্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে সেই আবেদন করা হয়। যদিও বিচারপতি সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের ওই আবেদন শুনতে চাননি। কারণ, তখন সুপ্রিম কোর্টেও আরজি কর মামলাটি বিবেচনাধীন রয়েছে । এর পরে শীর্ষ আদালতেও একই আবেদন করেন নির্যাতিতার মা-বাবা। তা নিয়েই বুধবার শুনানি হল।শুনানির শুরুতেই নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী জানান, ‘নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার আগে আবেদন করা হয়েছিল। এখন রায় ঘোষণা হয়ে গিয়েছে’। এর জবাবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন করে আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, -‘আগের আবেদনটিও প্রত্যাহার করতে হবে’।শুধু তা-ই নয়, নির্যাতিতার পরিবারের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ”কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি নিয়ে আসুন, এখানে মামলা রাখতে চাইছেন না কি কলকাতা হাই কোর্টে!” এক সপ্তাহ পর ফের শুনানি হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা করেছিল শিয়ালদহ আদালত। দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এই মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। এর পর ২০ জানুয়ারি শাস্তি ঘোষণা হয়। সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক অনির্বাণ দাস।সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ বুধবার আর জি কর ইস্যুতে নির্যাতিতার পরিবারের আবেদন শোনে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, -‘যেহেতু ইতিমধ্যেই এই মামলায় একটি রায় হয়েছে, তাই নির্যাতিতার পরিবারকে নতুন করে আবেদন করতে হবে’।এদিন আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই আইনজীবী তুষার মেহেতা জানিয়েছেন , ‘এভাবে তদন্তের মাঝপথে তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্যাতিতার বাবা-মা যে আবেদন করেছেন, তাতে আসলে সুবিধা পাবে দোষীই। তাঁর কাছে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সব প্রশ্নের জবাব আছে। চাইলেই সেই জবাব তিনি দিতে পারেন’। যদিও আদালত জানিয়ে দেয়, ‘সেটার কোনও প্রয়োজন নেই। নতুন করে আবেদন দাখিল করবে নির্যাতিতার পরিবার’। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরই পুরনো আবেদন প্রত্যাহার করে নতুন করে আবেদন করছে নির্যাতিতার পরিবার।