“আনন্দময়ীর পূজা আয়োজন বিদেশের মাটিতে” – শীর্ষক আলোচনায় রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি কলকাতা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অঙ্গনে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অঙ্গস্বরূপ গত ১৫ ই জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৫ই জানুয়ারি পর্য্যন্ত নানা বিষয়ে, নানা ভাবনার অভিনবত্বে এই গৌরবমণ্ডিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ আন্তর্জালিক মাধ্যমে প্রতি বুধবার একটি করে সান্ধ্যবৈঠকের আকারে আলোচনাচক্র এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলেছে – ধারাবাহিকতার বিচারে যেটি একটি অভিনব উদ্যোগ। সেইরকম একটি ভাবনার সার্থক রূপায়ন হল গত বুধবার, ২৯ শে সেপ্টেম্বর তারিখে “বিশ্বঘরে জননী আসছে – রবির শরৎ মেঘে ভাসছে” এই শিরোনামে আলোচনাচক্র ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানত বিদেশের মাটিতে বাঙ্গালীর সেরা উৎসব দুর্গাপূজার আয়োজন ও তাকে ঘিরে সেখানকার মানুষজনের সাংস্কৃতিক উন্মাদনা জাতিধর্মনির্বিশেষে একযোগে – এটিই ছিল আলোচনার মূল বিষয়। বিদেশে বসবাসকারী বাঙ্গালী সম্প্রদায় ও নানা ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিবর্গ তাদের বক্তব্যে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে যে আনন্দ, একাত্মবোধ, সম্প্রীতি ও বিশ্বজনীন সৌভ্রাতৃত্ববোধের সুর বেজে ওঠে সেটি তুলে ধরেন। আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে তাদের বাড়িতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজার কথা বলেন। ফ্লোরিডা থেকে অংশগ্রহণকারী সঙ্গীতশিল্পী সঞ্চিতা পাল একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান। নিউ জার্সিতে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর আদ্যাপীঠ মন্দিরের দুর্গাপূজা আয়োজক কমিটির সদস্য পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় ঐ মন্দিরের পূজার কথা ও ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ভারতীয় কলাকেন্দ্র ইত্যাদি সংস্থার পূজার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করেন। সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দুর্গাপূজার অভিজ্ঞতার কথা বলেন মধুমিতা চ্যাটার্জি – একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান। টরন্টো থেকে যোগদান করেন হিন্দু ধর্মাশ্রম মন্দিরের সভাপতি চিত্ত ভৌমিক ও ভারত সেবাশ্রম সংঘ থেকে প্রতিনিধি অমিত মুখোপাধ্যায়। তুরস্ক থেকে তরুণ লেখক, গবেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা সাকিল রেজা ইফতি তুরস্ক ভাষায় অনুদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর গীতাঞ্জলি গ্রন্থ থেকে কবিতা আবৃত্তি করেন এবং সেই দেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর রচনাসম্ভারের প্রতি সেই দেশের মানুষের আকর্ষণের কথা বলেন। লন্ডন থেকে যোগদান করেন সেই দেশে বসবাসরত আনন্দ সুন্দরম ও বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনন্দ গুপ্ত। লন্ডনে দুর্গাপূজার বিস্তার ও তাকে ঘিরে মানুষজনের উৎসাহ উদ্দীপনার কথা বিস্তারিতভাবে বলেন। গিটারে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বাজিয়ে শোনান আনন্দ সুন্দরম এবং খালি গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান ডাঃ আনন্দ গুপ্ত। পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে এই উৎসব নিয়ে কথা বলেন শুক্লা রায় চৌধুরী – উল্লেখ করেন ৩০০ বছরের প্রাচীন পূজা হয় তাদের গ্রামের বাড়িতে পারিবারিকভাবে – একটি গানও গেয়ে শোনান তিনি। ঢাকা থেকে যোগদানকারী জান্নাত ফিরদৌসী লাকি সেখানকার দুর্গাপূজায় সকল ধর্মের মানুষজনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সম্প্রীতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন – একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। প্রযুক্তিগত সহায়তা করেন সদস্য হিমাদ্রি মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান শেষে সোসাইটির তরফে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সোসাইটির সদস্য শ্যামল সেনগুপ্ত।