Spread the love

আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী আজ

কাজী নূর।। আজ ১৯ জানুয়ারি। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সেনাপ্রধান, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক এবং ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ (Bangladesh Nationalist Party) ‘বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই বীর পুরুষ। জিয়াউর রহমানের বাবার নাম মনসুর রহমান এবং মা জাহানারা খাতুন। জিয়াউর রহমানের বাবা তৎকালীন সময়ে কলকাতার একটি সরকারি অফিসে কেমিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভারত ভাগ হওয়ার পর মনসুর রহমান করাচিতে বদলি হয়ে গেলে পুত্র জিয়াউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে যান। এর আগ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান কলকাতার ঐতিহ্যবাহী হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করতেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়াউর রহমান কেবলমাত্র একটি নাম নয়। জিয়াউর রহমান একটি অধ্যায়, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাস। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিল কমল। বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব কৈশোর অতিবাহিত করার পর জিয়াউর রহমান পিতার কর্মস্থল করাচিতে চলে যান। জিয়াউর রহমান ১৯৫৫ সালে শিক্ষাজীবন শেষে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও জিয়াউর রহমানের বৈশিষ্ট ছিল তিনি দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে ত্রাণকর্তা হিসেবে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন এবং সেই সঙ্কট থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে রণাঙ্গণের অকুতোভয় এই যোদ্ধা আবার ফিরে গেছেন সেনাবাহিনীর ব্যারাকে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীর উত্তম’। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান সময়ের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তারই হাতে গড়া সেই রাজনৈতিক দল আজ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত। আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসিকতা, সততা নিষ্ঠা ও সহজ সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমানের অবদান অসামান্য। ইতিহাসে যে কয়েকজন সামরিক অফিসার দেশের জন্য দু- দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে লড়াই করার গৌরব অর্জন করেছেন জিয়াউর রহমান ছিলেন তাদের-ই একজন। জিয়াউর রহমান ১৯৬৫ সালে পাক- ভারত যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং অন্যতম সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ও ফোর্সেস কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গড়ে ওঠেছিল প্রথম ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’। প্রেসিডেন্ট জিয়া বিশ্ব- মানচিত্রে বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন তার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে। বিশ্বব্যাপী বাঙালি জাতির মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন তার শাসনামলে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরের অক্টোবরে মেজর জেনারেল (সেনাবাহিনী প্রধান) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জিয়াউর রহমানের সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম এদেশের প্রতিটি মানুষ আজও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। জিয়াউর রহমান এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, যে দেশটি একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবে তার পরিচিতি সর্বজনবিদিত। সময়ের পরীক্ষায় আজ উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও দিক নির্দেশনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর তারই সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরবর্তীতে নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে সিপাহি- জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের সেই চরম ক্রান্তিকালে সিপাহি- জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান নেতৃত্বের হাল ধরেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক- ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। জিয়াউর রহমান সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশের জন্য নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতার গুণগত মান উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণদানের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’ (পিআইবি) জিয়াউর রহমানেরই চিন্তার ফসল। স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রণীত আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। জাতির মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তাদের জাগিয়ে তুলতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন দূর দৃষ্টিসম্পন্ন একজন দেশপ্রেমিক ও রাজনীতিক। আর্থ- সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য উৎপাদনমুখী রাজনীতির প্রবর্তন করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গেলে তার সম্মানে আয়োজিত সভায় ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি বলেছিলেন- Your position is already assured in the annals of the history of your country as a brave fighter who was the first to declare the independence of Bangladesh. Since you took over the reins of government in your country, you have earned wide respect both in Bangladesh and abroad as a leader dedicated to the progress of your country and the wellbeing of your people.

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে ‘একুশে পদক’ নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এছাড়া ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রবর্তন করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শাহাদতবরণ করেন। জিয়াউর রহমান তার নানাবিধ কীর্তিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। অমর হয়ে থাকবেন ততদিন বিশ্ব মানচিত্রে যতদিন থাকবে বাংলাদেশ নামের একটি ভূখণ্ড। জিয়াউর রহমান যে কতখানি জনপ্রিয় ছিলেন তা বোঝা গিয়েছিল তার জানাজায় মানুষের ঢল দেখে। তার পরদিন পত্রিকায় শিরোনাম ছিল ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *