আদিবাসীদের জন্য ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু হলো আউসগ্রামে
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান -:
একদিন বাঙালির ফুটবল নিয়ে কত কথা, কত গান, কবিতা রচিত হয়েছে। ফুটবল হয়ে উঠত চলচ্চিত্র, উপন্যাসের বিষয়বস্তু। রক্ষণে খালি পায়ে 'চীনের প্রাচীর' এর মত দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতেন গোষ্ঠ পাল। চুনী, পিকে, বলরামদের দেখানো পথ ধরে ফুটবল মাঠের শিল্পী হয়ে উঠতেন সুরজিৎ, কৃষানুরা। বিকেল হলেই তরুণ সমাজের গন্তব্যস্থল হয়ে উঠত খেলার মাঠ।
সেইসব আজ অতীত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ফুটবল মাঠগুলো মরুভূমির শূন্যতা বুকে নিয়ে করুণ ভাবে অপেক্ষা করে থাকে। যেন বলতে চায় - 'তোমরা এসে আবার ফুটবল নিয়ে বাঙালির গৌরবময় অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে এসো।' কেউ আসেনা! ওরা তখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে মশগুল। তারই মাঝে কয়েকজন আদিবাসী ছেলেদের ফুটবল মাঠে দাপাদাপি করতে দেখা যায়। দু'চোখে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও আর্থিক কারণে ফুটবল খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার সামর্থ্য ওদের নাই। 'গাইড' করার মত পায়না কোনো প্রশিক্ষককে। এবার ওদের সেইসব অভাব দূর করতে এগিয়ে এল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ প্রশাসন।
১৪ ই জুন তাদের উদ্যোগে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকার ফুটবল খেলায় আগ্রহী আদিবাসী ছেলেদের জন্য 'পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' -এর আনুষ্ঠানিক পথ চলা শুরু হয়। ছোড়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশে বারাসত মাঠে বিধানসভা এলাকার আদিবাসী ছেলেদের মধ্যে আয়োজিত একটি প্রীতিমূলক ফুটবল ম্যাচের মাধ্যমে ৩৩ জনকে বেছে নিয়ে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শুরু হয়। ষাটের বেশি ছেলে এই প্রীতিমূলক ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। জানা যাচ্ছে পরে আরও ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ শিবিরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফুটবলের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে সবাই অবাক। ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেবেন দীনেশ হাঁসদা, পার্থ টুডু প্রমুখরা। সপ্তাহে দুদিন শনিবার ও রবিবার বিকালে এই ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সমস্ত খরচ বহন করবে পুলিশ প্রশাসন।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টাস) অর্ক ব্যানার্জী, ডি এস পি (ডি এণ্ড টি) সুব্রত মণ্ডল, আউশগ্রাম থানার আইসি শান্তুনু অধিকারী, ছোড়া পুলিশ ফাঁড়ির ওসি রাহুল দাস, গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি বিশ্বনাথ দাস সহ এলাকার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ফুটবলার। প্রত্যেকেই পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকরা ফুটবলার ও কোচদের হাতে নির্দিষ্ট জার্সি তুলে দেন।
প্রশিক্ষণ শিবিরের কথা জানতে পেরে মঙ্গলকোটের প্রবীণ ফুটবলার প্রেমানন্দ মুখার্জ্জী বললেন, খুব ভাল উদ্যোগ। আমার আশা এদের হাত ধরেই বাংলা ফুটবল তার অতীত গৌরব ফিরে পাবে। প্রসঙ্গত, প্রেমানন্দ বাবু দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ বিনা খরচে আদিবাসী ফুটবলারদের কোচিং করাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশগ্রহণকারী ফুটবলারদের বলেন, দু'পা দিয়ে স্বপ্ন আঁকড়ে ধরবে তোমরা। এই খেলা দৃঢ় মানষিকতা তৈরি করে। চরিত্র গঠন হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ো না। তিনি আরও বলেন, যারা আজ সুযোগ পাওনি খুব শীঘ্রই তোমরাও সুযোগ পাবে। সুতরাং তোমরা হতাশ হয়োনা।