আজ প্রাথমিকে ‘রঞ্জন’ সংক্রান্ত মামলার ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি,
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
আজ অর্থাৎ সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুনানি রয়েছে। এর আগে সিবিআই তদন্ত কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল করেছিল রাজ্য (প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ)। জানা গেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে আজ অর্থাৎ সোমবার এই মামলার শুনানি হতে পারে ।অতি সম্প্রতি দুর্নীতির এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ।গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় শুনানি চলেছিল। ওইদিন এজলাসে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই আঞ্চলিক কর্তা উপেন বিশ্বাস। ওইদিন শুনানি পর্বে আদালত জানায় -‘ প্রাথমিক টেট মামলায় রঞ্জন ইস্যুর তদন্ত হবে হাইকোর্টের নজরদারিতে’। এই সংক্রান্ত তদন্তের জন্য সিবিআইকে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ। ১৭ জুনের মধ্যে আদালতে জমা পড়েছে সিটের তদন্তকারী অফিসারদের তালিকা। ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ দেন , -‘ সিবিআই তদন্তে যেখানে ‘রঞ্জন’ বা চন্দন মণ্ডলের বিষয়টি যুক্ত সেটি আদালতের নজরদারিতে চলবে।সিবিআই স্পেশাল ইনভেস্টটিগেটিভ টিম গঠন করবে অফিসারদের নিয়ে। কারা কারা সেই সিটে থাকবেন, তাদের নাম দিতে হবে আদালতে’। গত বুধবার বিচারপতির আরও নির্দেশ , -‘ এই টিমের সদস্যরা কেউ বদলি হতে পারবেন না তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এখনও পর্যন্ত সিবিআই তদন্ত সন্তোষজনক নয়’। প্রসঙ্গত কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় গত মঙ্গলবার এজলাসে সিবিআই তদন্তে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথে কথোপকথনে সিবিআই নিয়ে অনেক কথা উভয়ের মধ্যে চলে সেদিন। গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন সিবিআইয়ের প্রাক্তন কর্তা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস তাঁর এক ভিডিয়োয় ‘রঞ্জন’ নামে এক ব্যক্তির কথা বলেছিলেন, যে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিত। ওইদিন আদালতে বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে উপেন বিশ্বাস বলেন, -“আমি শপথ নিয়ে বলছি, রঞ্জন আসলে চন্দন মণ্ডল ছিল।” এরপর বিচারপতি উপেন বিশ্বাস কে প্রশ্ন করেন, -‘ তিনি মন্ত্রী ছিলেন। তাও কেন রঞ্জনকে গ্রেফতার করা হয়নি’। প্রতুত্তরে উপেন বাবু তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যক্ত করেন।তবে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ খুশি উপেন বিশ্বাসও।উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে সিবিআই তদন্ত এর নির্দেশ জারি করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে একসাথে ২৬৯ জনের চাকরি যায়। যা কার্যত নজিরবিহীন বলা যায়।যদিও গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এর তরফে জানানো হয়েছে নাম্বার বৃদ্ধির চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা ২৬৯ নয় ২৭৩ জন। এই বরখাস্ত শিক্ষকরা নিজেদের স্কুলে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে আদালত। আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট-এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যে দ্বিতীয় নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করে থাকে , তা বেআইনি বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস। ওই তালিকায় ২৬৯ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল শিক্ষক হিসেবে ।ওইদিন আদেশনামায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদের সচিবকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সিবিআই দফতরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।নির্ধারিত সময়ে হাজিরও হয়েছেন মানিক বাবু। গত ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট-এ পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে ২৬৯ জন এক নম্বর করে বাড়িয়ে সফল উল্লেখ করা হয় তালিকায় । এর মধ্যে হুগলি জেলাতেই ৬৮ জন। গত ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সেই তালিকা প্রকাশিত হয়। ওইদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী এই খতিয়ান তুলে ধরেন এজলাসে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীর দেওয়া এই তথ্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত । কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কিভাবে ২৬৯ জনের জন্য নিয়োগ তালিকা প্রকাশিত হল? সেই প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি। তাছাড়া, প্রশ্ন ভুলের কারণ দর্শিয়ে কিভাবে শুধুমাত্র ২৬৯ পরীক্ষার্থীর এক নম্বর করে বেড়ে গেল, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে আদালত। প্রতুত্তরে পর্ষদের আইনজীবী এজলাসে জানিয়েছেন , -‘ যোগ্যদের বঞ্চনা করা হয়েছে, এই অভিযোগে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়। আন্দোলনকারীরা পর্ষদে আবেদন করেন। জেলা ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন জমা পড়ে। সেই আবেদন থেকেই প্রশ্ন ভুলে ১ নম্বর করে যোগ করে ২৬৯ জন টেট উত্তীর্ণ হন’। এই যুক্তি খারিজ করে দেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই নিয়োগ তালিকা বেআইনি ঘোষণা করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি ওই ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। এই শিক্ষকরা যাতে স্কুলে ঢুকতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিদর্শকদের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি তাঁর আদেশনামায় উল্লেখ করেন – ‘ এই মামলার এফআইআর দায়ের করে অভিযোগের তদন্ত শুরু করবে সিবিআই। যেহেতু নিয়োগে এই অনিয়মের দায় পর্ষদ সভাপতি এড়াতে পারেন না, তাই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদের সচিবকে গত সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। রমেশ মালিক নামে এক টেট পরীক্ষার্থীর করা মামলার ভিত্তিতেই এ দিন এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।এরপরেই গত সপ্তাহে সন্ধ্যায় সিবিআই দফতরে হাজিরা দেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ।আদালত সুত্রে আরও জানা গেছে – ২০১৪ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই মতো টেটের পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। ফলপ্রকাশ হয় ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে। ওই বছরই প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। পরের বছর অর্থাত্, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে প্রায় ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৪২ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষকে হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্ত এর নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল করলো প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। আজ অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।