খায়রুল আনাম,
বীরভূম : আজ তিনি কোন চেয়ারে বসবেন? তাকে কী তার নিজের হাতে গড়া পুরনো চেয়ারেই বসতে দেওয়া হবে? না কী, তিনি নিজেই সরে থাকবেন তার নিজের পুরনো চেয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সময় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন, তখন থেকে তার সঙ্গি বোলপুরের অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট মণ্ডল। এক সময় বোলপুরের ডা. সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নিবিড় বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসে থাকলেও পরবর্তীতে তারা সরে যান। কিন্তু রয়ে যান কেষ্ট মণ্ডল। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি। এমন কী তিনি গোরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তিহাড় জেলে মাতৃহীন মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে বন্দিদশা কাটালেও, তিনি যেমন তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়েননি তেমনি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রকাশ্যে বলেছেন, কেষ্ট যে দিন জেল থেকে বেরিয়ে আসবে সেদিন আপনারা তাকে বীরের সম্মান দিবেন। ফিরহাদ ববি হাকিম বলেছেন, বাঘকে বেশিদিন খাঁচায় বন্দি রাখা যায়না। সেটাই হয়তো হয়েছে। খাঁচাবন্দি দশা কাটিয়ে বাইরে এসে দলীয় কাজে ফিরে আসেন। বসেন নিজের চেয়ারেই। তার অনুপস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় দল পরিচালনার জন্য গড়ে দেন কোর কমিটি। শুক্রবার ১৬ মে এক ঝটকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলকে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে কোর কমিটির সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তারপর শনিবার ১৭ মে অনুব্রত মণ্ডল দলের বোলপুর কার্যালয়ে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসেন। কিন্তু আজ রবিবার ১৮ মে কোর কমিটির বৈঠকে তিনি কোন চেয়ারে বসবেন, সেটাও মস্ত বড় প্রশ্ন। উদারতা দেখিয়ে তাকে জেলা সভাপতির চেয়ারে বসতে বললেও তিনি কী বসবেন? রয়েছে প্রশ্ন। পুরানের দৃষ্টান্ত থেকে বলা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বহু আগে একবার তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন গর্ভবতী সুভদ্রাকে ‘চক্রব্যূহ’ সম্বন্ধে কিছু বলার সময় গর্ভস্থ অভিমন্যু পিতার সেই বার্তায় চক্রব্যূহে প্রবেশের কথা শোনেন। কিন্তু সুভদ্রা ঘুমিয়ে পড়ায় গর্ভস্থ অভিমন্যূর আর চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসার কথা শোনা হয়নি। সেই উদাহরণেই আজ মনে করা হচ্ছে, কোন চক্রব্যূহে আজ অনুব্রত?