আইসিসি ভিশনটেক ২০২৫: ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
সম্প্রীতি মোল্লা,
কলকাতা, ১২ জুলাই, ২০২৫: কলকাতায় আজ অনুষ্ঠিত হলো ‘আইসিসি ভিশনটেক – লিড ২০২৫’, যেখানে দেশের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ গঠনে সরকারের শীর্ষ আধিকারিক, শিল্প নেতৃত্ব ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এক ছাদের নিচে মিলিত হলেন। “Empowering India’s Digital Future” থিমে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ডিপ-টেক, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও আত্মনির্ভর ডিজিটাল পরিকাঠামো নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্মেলনের মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স, পাবলিক এন্টারপ্রাইজ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিকনস্ট্রাকশন দপ্তরের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি জানান, “গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গের তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিপুল অগ্রগতি করেছে। ২০১১ সালে যেখানে এই খাত থেকে রপ্তানি ছিল মাত্র ₹৪,৫০০ কোটি, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹৩৫,০০০ কোটি। রাজ্য সরকারের পরিকল্পিত বিনিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজিটাল নীতির ফলে এই সাফল্য এসেছে।”
তিনি জানান, বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি প্রকল্পের ২৫০ একর জমিতে ইতিমধ্যেই ৪২টি সংস্থা জায়গা পেয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি কাজ শুরু করেছে এবং ৩টি সংস্থা ইতিমধ্যেই পূর্ণভাবে চালু হয়েছে। এই প্রকল্পে বাজারদর ₹২৫ কোটির জমি মাত্র ₹৫ কোটিতে বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার করেছে, তারই ফলশ্রুতি এই অগ্রগতি। বর্তমানে ঐ জমির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি একর ₹৪০ কোটি।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যের ২২টি আইটি পার্কে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর ও আসানসোল সহ বিভিন্ন জায়গায় নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওয়েবেল-এর অধীনে থাকা সেক্টর V-র ১০টি এবং শিলিগুড়ির ৩টি ভবন সম্পূর্ণভাবে ভাড়াটে দ্বারা পূর্ণ হয়েছে। টিসিএস, ইনফোসিস ও উইপ্রোর মতো সংস্থাগুলি রাজ্যে প্রায় ৫০,০০০ জনকে নিয়োজিত করেছে। টিসিএস মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করছে। কলকাতায় গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ-এর আরঅ্যান্ডডি কার্যক্রম শুরু হওয়া বাংলার সেমিকন্ডাক্টর যাত্রায় এক নতুন অধ্যায়।
সম্মেলনে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কস অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল অরবিন্দ কুমার বলেন, ভারত এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় AI মিশন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হওয়া ২৪টি স্টার্টআপ সেন্টারের মাধ্যমে প্রায় ২,০০০ স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে ৪২ শতাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহিলারা। পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি ডিপ-টেক সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
বেঙ্গল কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও দেবাশিস সেন বলেন, ভারতের AI সম্ভাবনাকে পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে এখনই একটি স্বতন্ত্র এআই মন্ত্রণালয় গঠনের প্রয়োজন, যা AI সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে পারবে।
Kyndryl India-র ভাইস প্রেসিডেন্ট অনুজ বৈদ বলেন, AI এখন ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। আজ AI প্রযুক্তির সাহায্যে মাত্র ১৪ মিনিটে কৃষিঋণ অনুমোদন সম্ভব হচ্ছে। ১৫ লক্ষ গ্রামীণ নারীকে ‘সাইবার রক্ষক’ হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা সাইবার নিরাপত্তায় স্থানীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
RS Software-এর চেয়ারম্যান রাজ জৈন বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে ডিজিটাল পেমেন্ট সফটওয়্যার ডিজাইনিং-এ ₹১০০ কোটি বিনিয়োগ করেছি এবং আগামী পাঁচ বছরে আরও ₹২০০ কোটি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছি। ভারতের জন্য এখন প্রয়োজন ডেডিকেটেড AI ও কোয়ান্টাম সেন্টার, যা ভবিষ্যতের ডিজিটাল অর্থনীতি ও দক্ষতা গড়ে তুলবে।”
আইসিসি-র শতবর্ষ উপলক্ষে আইসিসি ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটির চেয়ারম্যান অমিতাভ রায় বলেন, “ভবিষ্যত আমাদের দিকে এগিয়ে আসে না, আমরা সেটাকে তৈরি করি। আজকের এই আলোচনা যেন আগামী দিনের উদ্ভাবনের ভিত্তি হয়।”
ডঃ রাজীব সিং, ডিরেক্টর জেনারেল, আইসিসি, বলেন, “এত বিশিষ্ট অতিথি ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করতে পারা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ভারত এখন বৈশ্বিক AI কেন্দ্র হয়ে উঠছে, সেই লক্ষ্যে যুবসমাজকে দক্ষ করে তোলা, MSME-দের শক্তিশালী করা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।”