আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগে জট কাটলো

নিজস্ব প্রতিনিধি, 

 দীর্ঘদিন পর আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগের জট কাটল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে গত সপ্তাহে  মমতা পারিহার সহ ৪১৫ জন বঞ্চিত অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীর পক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেন, -‘রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।রণ গত প্রায় ২৬ বছর ধরে রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনওরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না’। অথচ তাদের দিয়ে সরকার সমস্ত কাজ করিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। ওই আইনজীবী আরও বলেন, -‘কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে নির্দেশিকা জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্যপদের ৫০% অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং ৫০ শতাংশ বাইরে থেকে নিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা বাইরে থেকেই ৭৫% শূন্যপদে নিয়োগ করেছিল’। এদিন উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখল। মামলার বয়ান অনুযায়ী আইসিডিস সুপারভাইজার পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৯ সালে। ৩৪৫৮টি আইসিডিস সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরে নির্দেশ নামায় পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে মোট শূন্যপদের ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারির কর্মী থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতেই নিয়োগ করতে হবে।অভিযোগ, রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের জন্য শুধমাত্র ৪২২টি শূন্যপদ রেখে বাকি ৩০৩৬ শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। রাজ্য সরকারের এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে কিছু অঙ্গনওয়ারির কর্মী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি  ২০২৩সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন যে ৫০% শূন্যপদে পদোন্নতির ভিত্তিতেই অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের থেকেই নিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখে বলে অভিযোগ।এখন মামলাকারীরা অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের প্রমোশনাল সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ১১৫২ জনের একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। যাঁরা পরবর্তীতে ভাইভা তে বসতে পারবেন। অভিযোগ, তাঁদের সেই প্যানেল প্রকাশ না করেই সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখে। আদালতে মামলা দায়ের হতেই ২০২৪ সালের ১৩ জানুয়ারি সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি  নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে রাজ্য। কিন্তু গত সপ্তাহে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ।নিয়োগ জট কাটাতে নতুন করে মৌমিতা ঘোষ, দীপা মন্ডল সহ ৪১৫ জন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী  এদিন  জানান কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ৫০% অঙ্গনওয়ারির সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের জন্য অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য তা না মেনে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। যাতে ৫০% সুপারভাইজার শূন্যপদ অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করা হয়, সেই নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে দাবি করেন তিনি।এরপরই বিচারপতির নির্দেশ দেন, যেহেতু সিঙ্গেল বেঞ্চের  নির্দেশের উপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই তাই রাজ্য সরকার ও পিএসসি ৫০% শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে। ৩৪৫৮ শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯ জনকে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। ওদিকে গত ১২ এপ্রিল প্রমোশনাল পদে নিয়োগের জন্য যে ৪০৯ জনের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য, তার নিয়োগ সরকার চালিয়ে যেতে পারবে। বাকি শূন্যপদে ১১৫২ জনের মেধা তালিকা থেকেই নিয়োগ করতে হবে। যেহেতু এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয় ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন তাই রাজ্য সরকার এই বিষয়ে নিজে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। গত সপ্তাহে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়-ই বহাল রাখল।

Leave a Reply