অসুর
রাণা চ্যাটার্জী
“..হুম ধাপে ধাপে তোর কেমন মুখোশ খুলি দেখ, এভাবেই তোকে শেষ করবো সোম”।
ফোনে গলাটা একটু চড়ে গেছিলো সুজাতার ।আসলে সোম কে যে সম্মান,স্নেহ দিয়েছিল সে কিনা মুখোশ ধারী লম্পট এটা অবিশ্বাস্য।
এখনো ফোনের অপরপ্রান্তে সোম।
ছি ছি সোম,এই কিনা তুই! এত্ত নোংরা”! ফোন কেটে স্নানঘরে শাওয়ারে ভিজলো যদি ঘেন্না গুলো নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যায়!
লেখালিখির সুবাদে পরিচয় সোমভদ্র সেনের সাথে। নিপাট ভদ্রলোকই যথেষ্ট সম্মান করতো বোন বলে । লেখা শুধরানো, পারিবারিক, অফিসের সমস্যা অনায়াসে শেয়ার করতেন।বন্ধু হয়েছিল সুজাতার স্বামীও বন্ধু হয়েছিল।
গত সপ্তাহে জন্মদিনে শুভেচ্ছা কার্ড, চকলেট কেকের সাথে ভুলবশত চলে আসা একটা নামের লিস্টই সব ধ্যানধারণা পাল্টে দিলো সুজাতার।প্রায় এগার জন মহিলার নাম লেখা চিরকূটে।কারুর পাশে ক্রশ আর কারুর পাশে লাভ সিম্বল।
অদিতি, শ্রমনী কে লিস্টে দেখেই সন্দেহ বাড়ে সুজাতার যারা বেশ কিছুদিন বড্ড চুপ।
লিস্টের কথা সোম কে বলতেই সে ভীষণ ক্ষেপে যায়! স্বর পাল্টে রীতিমতো হুমকি,”এটা কাউকে দেখালে শেষ করে দেবে”!
অদিতিকে ফোন করলে সুইচ অফ দেখে আরো সন্দেহ দানা বাঁধে। পাশের পাড়ায় অদিতির বাড়ি পৌঁছালে সে তো প্রথমে ভুত দেখার মত চমকে ওঠে।আড়ালে ছাদে সুজাতা সোমের কথা তুলে কান্নায় ভেঙে পড়ে অদিতি।চোয়াল শক্ত করে জানায়,একটা পত্রিকায় লেখা দেওয়ার পর থেকে খুব ভাব জমাতে আসে সে।ধীরে ধীরে প্রেম নিবেদন,কথার জালে ফাঁসিয়ে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতো আর এমন নাকি ও সবাইকে করে।অদিতির ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ছবি নিয়ে এক নগ্ন মহিলার শরীর জুড়ে ব্ল্যাকমেল শুরু করে চাপ দিতে থাকে একান্তে ফ্ল্যাটে যাওয়ার।এরপরই অদিতি ওর স্বামী কে নিয়ে সোমের বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ থানায় কমপ্লেন করে ও ফেসবুক নেট দুনিয়াকে বিদায় জানায়।সব শুনে অসুস্থতা বোধ করছিল সুজাতা।তার নিজের ওপর ভীষন ঘেন্না হচ্ছিল।কলেজ পড়ুয়া ও গৃহবধূ সাহিত্য অনুরাগী সরল মহিলারা নাকি সোমের সফট টার্গেট এটা অদিতি তার এক বান্ধবী ও সোমের রাত্রিকালীন চ্যাটের প্রমাণ সহ দেখায়।
“আমি আছি অদিতি যতদূর আইনী লড়াই করতে হয়,ভেঙে পড়ো না”- বলে বেরিয়ে এলো সুজাতা।পাশের এক ভাঙা বাড়ির জানালা থেকে মহালয়ার গান ভেসে এলো,”.. ..জা…গো তুমি জা….গো….. তুমি দুর্গা ।মনের মধ্যে একটা শক্তি যেন ভর করছে সুজাতার ,এই অসুর রুপী মানুষটাকে বধ করার,সামাজিক ভাবে তাকে শেষ করে দেওয়ার।