অনেক ক্ষেত্রে বধু নির্যাতন আইনের অপব্যবহার হচ্ছে, দিল্লি হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিনিধি,
এবার পণের দাবিতে নির্যাতন ও গার্হস্থ্য হিংসা রোখার জন্য যে আইন রয়েছে, তার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, ‘এই আইন অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে হেনস্থা করতে এবং কৌশলে সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে’।এই মন্তব্যের পাশাপাশি, এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া নির্যাতনের মামলাও খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ওই মামলায় অভিযোগ ছিল, -‘তিনি তাঁর স্ত্রীকে পণ ও সম্পত্তির জন্য হয়রানি করেছেন:।সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, -‘এই ধরনের মামলায় প্রায়শই স্বামী-সহ পুরো পরিবারকে অপরাধী করে ফেলা হয়, অথচ অভিযোগের পক্ষে কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকে না’। দিল্লি হাইকোর্টও এই বিষয়ে একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি অমিত মহাজন এক নির্দেশে বলেন, ‘বিবাহিত মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এটি এখন স্বামী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হেনস্থার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এবং তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’আদালত জানায়, মামলাটি খারিজ করার অন্যতম কারণ হল, -‘অভিযুক্ত স্বামী ও তাঁর স্ত্রী ২০১৪ সাল থেকেই আলাদা থাকছিলেন। এরফলে, দীর্ঘদিন পর এই অভিযোগ দায়ের করায় মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে’।অভিযুক্তের আইনজীবী আদালতে জানান, -‘তাঁর মক্কেলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে’। তাঁর বক্তব্য, -‘মামলাটি দায়ের করা হয়েছে স্ত্রীর নিজের পরকীয়ার ঘটনা লুকোনোর জন্য’।আবেদনকারী স্বামী জানান, -:২০১৪ সালে তিনি তাঁর স্ত্রীর অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি পান। এরপর থেকে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন:। পরে, ২০১৯ সালে ‘নৃশংসতা’র অভিযোগের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর হয়।অন্যদিকে, স্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, -‘বিবাহবিচ্ছেদের রায় এই মামলার প্রাসঙ্গিকতাকে প্রভাবিত করে না। তাঁর মক্কেল অভিযোগপত্রে সুস্পষ্ট অভিযোগ এনেছেন এবং সেই মামলা চালিয়ে যাওয়া উচিত’।তবে দিল্লিনহাইকোর্ট দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পরে বিবেচনা করে জানায়, -‘এফআইআরে কোনও নির্দিষ্ট তারিখ, সময় বা নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ নেই। দীর্ঘদিন পর মামলাটি দায়ের করাও সন্দেহজনক’। বিচারপতি বলেন, ‘যখন অভিযোগগুলো অস্পষ্ট এবং মামলার নথিতে ঘটনার সময় নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য নেই, তখন এই ধরনের বিচার চালিয়ে যাওয়া আইনের অপব্যবহারের সমান।’একথা বলে দিল্লি হাইকোর্ট এফআইআর খারিজ করে। পাশাপাশি, একই দিনে, সুপ্রিম কোর্টও এ ধরনের আইনি ব্যবস্থার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। শীর্ষ আদালত বলে, পারিবারিক বিরোধ মেটাতে বা স্বামীর উপর চাপ প্রয়োগ করতে অনেক সময় ৪৯৮এ ধারার অপব্যবহার হয় এবং এতে পরিবারের নিরপরাধ সদস্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।গত ডিসেম্বরেও সুপ্রিম কোর্ট এক পর্যবেক্ষণে বলেছিল যে, ‘এই আইন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়ার অস্ত্র হয়ে উঠেছে বা স্বামীর পরিবারের ওপর অনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’