অনুমতি ছাড়া কিভাবে ট্রাম লাইন তুলে পিচ দিয়ে বোঁজানো হচ্ছে? রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে ট্রাম লাইন সংরক্ষণ বিষয়ক মামলা।কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কী করে বেশ কিছু রুটের ট্রামের ট্র্যাক তুলে ফেলা হল? এবং সেই জায়গায় পিচ দিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট। শুধু তাই নয় মামলাকারীদের তরফে অভিযোগ করা হয়, পরামর্শদাতা কমিটিও বৈঠকে বসেনি। যা শুনে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। মহানগরের রাস্তায় ট্রাম থাকবে কি না?. তা খতিয়ে দেখতে গত বছর ৭ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট পরামর্শদাতা কমিটি গড়ে দিয়েছে। সেই কমিটি কোনও বৈঠক করেনি বলে অভিযোগ । যা শুনেই বিস্মিত হন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘ হাইকোর্ট বা পরামর্শদাতা কমিটির অনুমতি না নিয়ে কী করে ট্র্যাক তুলে ফেলা হল? বা সেই জায়গা বুজিয়ে দেওয়া হল, সেই ব্যাপারে সন্তোষজনক লিখিত জবাব দিতে হবে রাজ্যকে’। আবার একইসঙ্গে বন্ধ রুটগুলির চালু করার ব্যাপারে কতদূর এগিয়েছে? তাও জানাতে হবে রাজ্যকে। আদালত জানিয়েছে , -‘ যদি রাজ্যের ওই রিপোর্টে আদালত সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে কঠোর নির্দেশ দিতে বাধ্য হবে ডিভিশন বেঞ্চ’। এরপরেই আদালত পরামর্শদাতা কমিটি একবছর বৈঠকে না বসায় বিস্মিয় প্রকাশ করে থাকে । কেন এতদিন এই বৈঠক করা হয়নি তার লিখিত জবাব তলব করা হয়।আদালতের আরও নির্দেশ, আগামী বছর ১৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানিতে এই ব্যাপারে যাবতীয় রিপোর্ট দিতে হবে সব পক্ষকে। তার আগে ওই কমিটিকে বৈঠকে বসতে হবে। আদালত জানিয়েছে , -‘ ওই কমিটির বৈঠক করে ট্রাম নিয়ে তারা এতদিন কী পরামর্শ দিয়েছে বা কী পরিকল্পনা করেছে, সেই ব্যাপারে জানাতে হবে আদালতকে’।আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম লাইন তোলা যাবে না, যতক্ষণ না বিষয়টি আদালতে পরবর্তী সিদ্ধান্তে পৌঁছায় বা ট্রাম লাইন তুলে ফেলার ক্ষেত্রে পরবর্তী কোনো অনুমতির নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। একই সঙ্গে আদালত রাজ্যকে ট্রাম সংরক্ষণে গঠিত কমিটির সাথে যোগাযোগ না করে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছে।এই সমস্যার মূল বিষয়টি হল, কলকাতার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের জন্য রাজ্য সরকারের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্যোগের অভাব। যেমন, আদালত প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম মন্তব্য করেছেন, “ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।” যদি রাজ্য সরকার ট্রাম সংরক্ষণে ইচ্ছাশক্তি দেখায়, তবে আর্থিক ও অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই অতিক্রমযোগ্য। একদিকে, যখন রাজ্য ট্রাম ফিরিয়ে আনার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা হাতে নেই বলে দাবি করছে, অন্যদিকে প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেছেন যে, বিদেশের কিছু শহরে যেখানে ট্রাম সংরক্ষণ এবং আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে কলকাতায় কেন তা সম্ভব নয়?এমন পরিস্থিতিতে, রাজ্য সরকারের দিক থেকে ট্রাম ফিরিয়ে আনার জন্য অর্থের অভাবের কথা বলা হলেও, এটি অযৌক্তিক মনে হতে পারে বলে কেউ কেউ দাবি রেখেছেন । কারণ, কলকাতা শহরের পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে ট্রাম ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বে বহু শহরে, সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে ট্রাম ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হয়েছে এবং সফলভাবে চলতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডন, প্যারিস, সিডনি, মেলবোর্নের মতো শহরে আধুনিক ট্রাম পরিষেবা চলছে, যা শহরের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করেছে।এদিকে, ট্রাম লাইন তোলার জন্য রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল শহরের রাস্তা থেকে ট্রাম লাইনগুলো তোলা হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে। বিশেষ করে, বাইক ও স্কুটি চালকরা ট্রাম লাইনের কারণে বিপদের মুখে পড়ছে। তবে, এই যুক্তি অনেকটাই অসম্পূর্ণ এবং একপেশে মনে হচ্ছে, কারণ ট্রামের আধুনিকীকরণ, রাস্তায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যাত্রীদের জন্য নিরাপদ যাত্রাপথ সৃষ্টি করা সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ ছিল ট্রাম লাইনের অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং ট্রাম চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা।