‘অনুবাদ পত্রিকা’-র সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন

২০ এপ্রিল ২০২৫, সল্টলেকে ঐক্যতান প্রেক্ষাগৃহে অনুবাদ পত্রিকার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন হল অজস্র পাঠক, অনুবাদক এবং শুভাকাঙ্খীদের সমাগমের মধ্যে দিয়ে।
অনুবাদ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বৈশম্পায়ন ঘোষাল এবং সোনালী ঘোষালের স্মৃতির প্রতি বর্তমান সম্পাদক বিতস্তা ঘোষালের মাল্যদানের পর শুভ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদযাপনের আত্মাকে সুরে সুরে ভরে তোলেন প্রতিশ্রুতিময়ী নবীন কণ্ঠশিল্পী রাপূর্ণা ভট্টাচার্য।
“অনুবাদ শুধু বিশ্বের দ্বার খুলে দেয় না, নিজেদেরকেও সমৃদ্ধ করে,” বিতস্তা অনুষ্ঠানে মূল ভাষণে এই গুরুত্বপুর্ণ কথাটি বলে গোটা আয়োজনটির তাৎপর্য নির্ণয় করেন।
লিচ্ছবি রায়চৌধুরী এর পর এক আন্তরিক স্মৃতিচারণে তাঁর মা বিতস্তা –কে অনুবাদ পত্রিকা-র সঙ্গে সক্রিয় হওয়া এবং ক্রমশ এই পত্রিকার প্রধান দায়িত্ব গ্রহণের ইতিহাস তুলে ধরেন।
ওডিআ, ঝাড়খন্ড এবং অসম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার ৫০ জন বিশিষ্ট কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমে আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে অনুবাদচর্চার গুরুত্ব শ্রোতা-দর্শকদের মনে প্রতিষ্ঠিত হয়।
উড়িষ্যার বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং সাহিত্যপ্রেমী ডঃ রোজালিন পাট্টাসানি মিশ্র এরপর মঞ্চে সম্মানিত হন সাহিত্যে তাঁর যোগসূত্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টার জন্য।
পরবর্তী পর্বে ” অনুবাদ পত্রিকা ও বৈশম্পায়ন ঘোষাল স্মারক বক্তৃতা” প্রদান করেন সাহিত্য আকাদেমি-র প্রাক্তন আঞ্চলিক প্রধান রামকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁর বিষয় ছিল ভারতবর্ষে অনুবাদ চর্চার ক্রমিক ইতিহাস ও ১৯৭৫ সালে বৈশম্পায়ন ঘোষাল প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত অনুবাদ পত্রিকার আদর্শ এবং অবদান। বিশিষ্ট সাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় অনুবাদ পত্রিকার বিবর্তন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের মূল পর্বে ‘অনুবাদ পত্রিকা জীবনকৃতি সারস্বত সম্মান ২০২৫’ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট ওডিআ কবি ফনি মহান্তি এবং বর্ষীয়ান কবি এবং অনুবাদক মঞ্জুভাষ মিত্রকে। দুজনেই তাঁদের বক্তৃতায় স্মরণ করিয়ে দেন অনুবাদকের প্রাথমিক দায়িত্ব মূল লেখার ভাব অবিকৃত রাখা ও অন্য ভাষার সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলা।
ছত্তিশগড়ের রায়পুর অধিবাসী হিন্দি ও বাংলা ভাষার অনুবাদক মিতা দাস এবং ফরাসি ভাষা চর্চার এক অন্যতম মুখ এবং দক্ষ অনুবাদক সৈয়দ কওসর জামালকে প্রদান করা হয় ‘সোনালী ঘোষাল সারস্বত সম্মান ২০২৫’। এদিন সাংবাদিকতা ও অনুবাদের জন্য সম্মানিত হন বরিষ্ঠ সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল। সকলেই স্বীকার করেন আজকের পৃথিবীতে যোগসূত্রের অন্যতম মাধ্যম অনুবাদ।
এরপর ‘অনুবাদ পত্রিকা’ স্মারক গ্রন্থ ও ফনিমহান্তির কাব্যগ্রন্থ অহল্যার সোনালী সাহু কৃত ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক জয়ন্ত দে, ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়,বাসুদেব দাস, পরিচালক শেখর দাস, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মনোবিদ ডাক্তার দেবাঞ্জন পান,কবি শুভ্রা সেনগুপ্ত, তন্ময় মুখার্জি, আইনজীবী রম্যানি ঘোষাল, বিপাশা ঘোষাল, তৃষ্ণা বসাক, জয়া চৌধুরী, মণিদীপা সান্যাল, ওডিআ কবি যশোধরা দাস, যামিনীকান্ত দাস,পবিত্র মোহন দাস, সাঁওতালি ভাষার কবি বাদল হেমব্রোম সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অনুবাদ পত্রিকার সহ সম্পাদক বিবেক চট্টোপাধ্যায় ও অদিতি চক্রবর্তী।
শেষে একটি কথা না বললেই নয় আজকের দিনে যেখানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করতে না পারলে সভাগৃহ ফাঁকা থাকে সেখানে এই অনুষ্ঠানে একটি পর্বে দেখা গেল সভাগৃহ কানায় কানায় ভর্তি এবং বহু মানুষ দাঁড়িয়ে।তৎক্ষনাৎ প্রায় ৫০ টি চেয়ারের ব্যবস্থা করা হল।এর দ্বারা বোঝা যায় শুধু মাত্র অনুবাদকে কেন্দ্র করে অনুবাদ পত্রিকা ৫০ বছর কিভাবে টিকে আছে। তাকেই সম্মান জানলো সাহিত্য জগত।

Leave a Reply