Spread the love


হোলি ভালোবাসার মূর্ত রূপ

হোলি খেলা কি শুধু রঙের খেলা ? মনের খেলা নয় ? হোলি মনে কেন দোল দেয় ! মনে দোল দেয় বলে কি দোল খেলা ! হোলি মিলনের খেলা বলে প্রাণের খেলা হয়ে ওঠে ।
হোলি প্রকৃতি পর্যায়ের এক প্রাণের খেলা । ফাগ ফাগুনের (ফাল্গুন ) কী মিতালি ! অলি দলে দলে গুঞ্জনে কৃষ্ণচূড়ার বনে । রঙের রঙে মিলে গেলে বেশ হয় ! পাতা গজানোর পালা শুরু হলে পাতা ঝরার পালা । সকালে ঘাসের রেখায় মুক্তোর মতো ছড়িয়ে থাকে লক্ষ শিশির বিন্দু । তারা হেসে লুটোপুটি । অসীম নীল আকাশে পাখি মেলে ডানা । কোথাও সে ধরা দিতে চায় না । ঋতুচক্রের পথে বসন্তের হাত ধরে সে আসে । চৈত্রের ডাকে রুপের হাট থেকে তাকে রঙ নিয়ে আসতেই হয় । হোলি বসন্ত উৎসবের এক অন‍্যতম রঞ্জিত রূপ বলা যায় । ভালোবাসা তো কখনো চোখে দেখা যায় না ‌। হোলি খেলা ভালোবাসার সেই মূর্ত রূপ ‌। বাঁশির অমোঘ টানে রাধাকে ছুটে আসতেই হয় কুঞ্জবনে । প্রাণ সখা কৃষ্ণের সঙ্গে মিশে সখী পরিবৃত্ত আবির মাখে তারা হোলি খেলে । সখি ,এতো সুখ প্রাণে যে সয় না ! বেসুরে সুরে , রঙবেরঙে রঙ হয়ে ওঠে ‌। চেনা অচেনা হয়ে ওঠে মরমিয়া । সুন্দর আরো সুন্দর হয় । হোলি খেলা প্রাণে সুখ বয়ে আনে । তখন কিশোর হয়ে উঠি কিশোরীর হাত ধরে । মনে হয় প্রজাতির মতো ফুলের বনে মেলে দিই ডানা । হোলি খেলি শুধু তার সঙ্গে মেঠো পথে ধরে । কৃষ্ণচূড়া এতো রঙ পায় কোথায় ! পাকুড় ,পলাশেরা ! রামধনুর দেশ থেকে চুরি করে আনে বুঝি ! প্রজাপতি পাহারা দেয় না ? বসন্তে হলুদে রাধাচূড়ার কেন এতো অভিমান । তার ছায়া পড়ে সর্ষে ক্ষেতের শেষ সীমানায় কেমন নীরবে । কৃষ্ণচূড়াকে সবাই আদর করে বলে । তাই রাধাচূড়ার এতো অভিমান । রাধার জন‍্যে কৃষ্ণের এতো ভালোবাসা রাধা কেন বুঝতে দেরি করে । কৃষ্ণের ভালোবাসা তো শুধু রাধার জন‍্যে । তার বাঁশি বলে শুধু রাধা ,রাধা ,রাধা ‌‌। রাধা তাই কান পেতে রয় ।
এমন দিনে যদি পুরুলিয়ার বেগুনকোদরে থাকতাম । সাঁওতাল পল্লীতে পাহাড়ের কোলে শাল ,পলাশ ,মহুয়া বনে । হেমন্ত সোরেনদের শান্তির সেই শান্ত কুটিরে । সকাল থেকে হোলি খেলতাম । মাদল বাজত । মহুয়া ফুলের রসে চোখে লাগত নেশা । তখন বলতাম ,প্রিয়া ,ফুল খেলবার দিন অদ‍্য । চোখে লেগেছে নীল মদ‍্য । চোখে মদ‍্য তো লাগবেই যদি সে পলাশ রাঙা হয়ে ওঠে । রাতে পলাশ ফুল জলে ভিজিয়ে রেখে দিলে ,হোলির দিন সকালে সুবাসিত, রঞ্জিত জলে রোমাঞ্চিত লাগে হোলি খেলে । এমন হোলি খেলা কেউ কখনো ভোলে ! ইস, আজ যদি সুমনা থাকতো ! পলাশের লাল জলে হোলি খেলে তাকে রাঙিয়ে তুলতাম ‌! তার লজ্জা ঢাকুক সুবাসিত ,রঞ্জিত রঙে ‌। আরো রাঙিয়ে উঠুক আবির মেখে । তৃপ্ত তখন তার সারা শরীরে। পাহাড়, ঝর্ণা, শাল ,পলাশ ,মহুয়া বনে লাগে ফাগুনের দারুন রাগে ! পাহাড়ের গুহা থেকে ,ঝর্ণার পথ ধরে ,বন থেকে বনে বনে ,পাহাড়ী পথে পথে সাঁওতাল পল্লীর আবাল বৃদ্ধ বনিতারা হোলিতে ওঠে মেতে । প্রাণের স্পর্শে হর্ষে তারা হোলি খেলে মাদলের সুরে নেচে ‌। তাদের চোখে তখন নীল নেশা । তাদের এমন হোলি খেলা দেখা স্বর্গের রম্ভা, ঊর্বশীরাও হিংসা করে । তাদের একটাই রঙ মনের রঙ,একটাই সুর প্রাণের সুর ‌। বিশ্ব প্রেমিক প্রেমিকার দল হয়ে ওঠে তারা । প্রেমের বাঁধনে তারা কেমনে বেঁধেছে বিশ্বকে !
এমন দিনে হোলি খেলি বা না খেলি মনে দোল লাগে ‌‌। হোলি এসে কখনো দোল দিয়ে যায় মনে ! হোলি খেলতে এখন আর ইচ্ছা হয় না । পাহাড় রাজ‍্যের রাজ‍্যকন‍্যা সুমনা আসে না তাই ‌। কিন্তু সে যে কখন রাঙিয়ে দিয়ে যায় মনে ! মনের দুয়ার খুলে পথ হয়ে ওঠে লাল ,গোলাপী । মহুয়ার গন্ধে বাতাস মাতাল হয় মনের গভীরে ।
হোলি শুধু প্রেমের খেলা ? ‌বিরহের খেলা নয় ? হোলিতে আছে শুধু মিলন ? মিলন আছে বলে এতো উচ্ছ্বাস ,এতো আনন্দ, এতো প্রেম ! ‌এমন প্রেমের খেলা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই ।

সুবল সরদার
১৫ ০৩ ২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *