সিবিআই অনুসন্ধানে ডিভিশন বেঞ্চের অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ, সাময়িক স্বস্তি রাজ্যের
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত এর ডিভিশন বেঞ্চে তিন সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি হলো এসএসসি নিয়োগে সিবিআই অনুসন্ধান নিয়ে।কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল করেছিল রাজ্য।তাতে সাময়িক স্বস্তি মিললো রাজ্যের।স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। বুধবার এই নির্দেশিকার ওপর অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। বুধবার এই মামলার শুনানি ছিল। তিন সপ্তাহের জন্য সিবিআই অনুসন্ধানে স্থগিতাদেশ দিল হাইকোর্ট। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ২৫ জনের নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ থেকেই এই মামলা দাখিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালত কে জানায়, ‘ ওই ২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশ করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন ‘। তাহলে কিভাবে নিয়োগ হল সুপারিশ ছাড়া, কিভাবে ওই ২৫ জন দু বছর ধরে চাকরি করছে সেই প্রশ্ন এজলাসের শুনানি পর্বে আসে। এরপরই সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নির্দেশে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল ছিল সিবিআই এর অভ্যন্তরে । এরই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । তিন সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, তাই প্রমাণ লোপাটের বিষয়টিও গুরত্ব দেন বিচারপতিরা।বুধবার দুপুর তিনটে মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের। প্রমাণ লোপাটের কথা মাথায় রেখে আদালতের তরফে বলা হয়েছে, কমিশন ও বোর্ড সব নথি জমা দেবে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে।যে গুলি সিবিআই কে দেওয়ার কথা ছিল। সিল কভারে আদালতে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে।এই মামলায় ওই ২৫ জনের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। যে ২৫ জনের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বুধবার তাঁদের আইনজীবী আদালতকে জানান, ‘সিঙ্গল বেঞ্চ অভিযুক্তদের মামলায় বলতে না দিয়েই বেতন বন্ধ করে দিয়েছে। এটা কোনও জনস্বার্থ মামলা নয়। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বলতে দিতেই হবে।’এদিন মামলার শুনানিতে রাজ্যের হয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, – ‘৪ মে ২০১৯-এ প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ করে থাকে । দুটি সংস্থা দু ধরনের তথ্য দিচ্ছে। এখানে আপত্তি ওঠে। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে যাতে তদন্ত করানো যায়, এই আর্জি জানানো হয় রাজ্যের তরফে।উল্লেখ্য, গত ২০১৬ সালে রাজ্যে গ্রুপ ডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই মতো ১৩ হাজার নিয়োগ হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে সেই গ্রুপ ডি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়। তারপরেও একাধিক নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশের কথা জানা গিয়েছে। সেই তথ্য হাইকোর্টের হাতে আসে। কী ভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ নিয়োগ তালিকা থেকে নিয়োগ তারই কৈফিয়ত চায় হাইকোর্ট। পরে কমিশন জানায় তারা কোনও সুপারিশ করেনি। এদিকে, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ হল এই নিয়োগের ‘অ্যাপয়েন্টিং বডি’, আর কমিশন হল ‘রিক্রটমেন্ট বডি’। আদালতকে পর্ষদ জানায়, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তারা এই নিয়োগ করে। নিয়োগ নিয়ে দুই সরকারি দফতরের দ্বন্দ একেবারে প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপর ২৫ জনের বেতন বন্ধ করার নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি। পরে ওই মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এর ডিভিশন বেঞ্চ এই সিবিআই অনুসন্ধানের উপর তিন সপ্তাহের অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে। আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।