লক্ষী পুজোয় মেতে উঠল সালন্দা গ্রাম,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও কোনো কোনো এলাকায় লক্ষী পুজোর জনপ্রিয়তা দুর্গাপুজোকেও অতিক্রম করে যায়। গত ২৯ বছর ধরে তারই প্রমাণ দিয়ে চলেছে পশ্চিম মঙ্গলকোটের সালন্দা দুর্গামাতা সংঘ পরিচালিত শ্রী শ্রী সার্ব্বজনীন লক্ষী পুজো। বিগত বছরের মত এবছরও জাতি-ধর্ম, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে সমগ্র গ্রামবাসী। সবার মিলিত অংশগ্রহণে পুজো হয়ে ওঠে সত্যিকারের সার্ব্বজনীন।
চিরাচরিত পুজো অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে এবছরও তারা মেতে ওঠে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদিতে। রাজু চৌধুরীর নির্দেশনা ও পরিচালনায় ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর গ্রামের শ্রদ্ধা, স্নেহা, রীমা, শিবানী, সঞ্চিতি, অরিন, অদিতি, সুচেতা, সংলাপ, সামিয়া, সুলতা প্রমুখ দ্বারা পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খুবই উপভোগ্য ছিল। করোনা বিধিনিষেধ মান্য করেও তিন দিন ধরে গ্রামবাসীদের উপস্থিতি তারই সাক্ষ্য বহন করে। প্রসঙ্গত আধুনিক প্রযুক্তির চাপে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছে বা রাখতে বাধ্য হচ্ছে তখন রাজুর নির্দেশনায় ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় এইসব ছেলেমেয়েরা শুধু নিজ এলাকায় নয় বর্ধমান শহরের বুকেও নিজেদের প্রতিভার সাক্ষর রেখে এসেছে।
গত কয়েক বছরের মত এবারও পুজো উপলক্ষ্যে মেয়ের বাড়ি সালন্দাতে এসে ১৮ জন দুস্থ ব্যক্তির হাতে বস্ত্র তুলে দেন প্রশান্ত ব্যানার্জ্জী ও রেখারাণী ব্যানার্জ্জী। তবে এবার তারা বস্ত্র তুলে দেন প্রয়াত বৈবাহিক মহাশয় ও মহাশয়া শান্তি রায় ও গীতা রায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। এটাও বাংলার বুকে এক বিরল ঘটনা। বস্ত্র পেয়ে মরিয়ম বিবি, আনোয়ারা বিবি, লক্ষী বেসরারা খুব খুশী। একইসঙ্গে দুর্গাপুজোর সময় যেসব প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয় তাতে যারা জয়লাভ করে তাদের হাতেও পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়।
গ্রামের মেয়ে অদিতি রায় বললেন - লক্ষী পুজোর জন্য আমরা কার্যত সারাবছর ধরে অপেক্ষা করে থাকি। তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে শুধু গ্রামের ছেলেমেয়েরা নয় বৌরাও অংশগ্রহণ করে। মা-কাকীমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাটা খুবই আনন্দের।
অন্যদিকে রাজু চৌধুরী বললেন - শুধুমাত্র এইসব ছেলেমেয়েদের আন্তরিকতা আমাকে বারবার তাদের কাছে টেনে নিয়ে আসে। সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে যখন এদের কাছে আসি সমস্ত ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে যায়। সাংস্কৃতিক জগতে এদের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল।