Spread the love

রাজ্যে নেই হিরা, নেই রেরাও:

পার্থ প্রতিম সেন (প্রাক্তন চেয়ারম্যান পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাংক)

গৃহক্রেতাদের সুরক্ষা, আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আবাসন নির্মাতাদের কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনা এবং তাদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভারতবর্ষে রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন এবং ডেভেলপমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৬ লোকসভা ও রাজ্যসভার অনুমোদনে চালু হয় ২০১৬ সালের ১ লা মে থেকে।

প্রথমে মোট ৯২ টি ধারার মধ্যে ৬১টি ধারার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় ২০১৬ সালের ১ লা মে। বাকি ধারা গুলির বিজ্ঞপ্তি জারি হয় ২০১৭ সালের ১ লা মে।

এই আইন অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যে ছয়মাসের মধ্যে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি বা রেরা গঠন করতে বলা হয় যাতে আবাসন শিল্পে নির্মাতা, ক্রেতা, বিক্রেতাদের মধ্যে কোনো ধরনের বিবাদ নিষ্পত্তি খুব তাড়াতাড়ি করা যায়।

এই আইন কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

কেন্দ্রীয় এই আইন অনুযায়ী দেশে সমস্ত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশন বা পঞ্জীকরণ রাজ্যে রাজ্যে রেরার সাথে করা বাধ্যতামূলক এবং প্রত্যেক নির্মাতাদের রেরা আইনের বিভিন্ন ধারা মেনে চলতে হবে, না হলে পেনাল্টি হবে।

এই আইন লাগু করার পিছনে মূল ভাবনা হল নির্মাতারা যাতে কোনো ধরণের কোনো অস্বচ্ছ, বেআইনি কাজ করতে না পারে এবং ক্রেতাদের সুরক্ষা যাতে নিশ্চিন্ত হয়।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ওয়েষ্ট বেঙ্গল হাউসিং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেটরি অ্যাক্ট (হিরা), ২০১৭ চালু হয় ১ লা জুন ২০১৮ থেকে। তার আগে গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর এবং এই আইনের কুড়ি নম্বর ধারায় পশ্চিমবঙ্গে হাউসিং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেটরি অথরিটি বা হিরা স্থাপিত হয়।

তবে গত বছরের ৪ মে রাজ্য সরকার প্রণীত ‘হিরা’কে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের মূল বক্তব্য বা ভাবনা হল যাতে দেশের প্রতিটি রাজ্যে একই আইন রেরা বলবৎ থাকে।

তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে রেরা কার্যকর না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করল আবাসন ক্রেতাদের সংগঠন ফোরাম ফর পিপলস কালেকটিভ এফোর্টস ( এফপিসিই)

সংগঠনের সভাপতি অভয় উপাধ্যায় বললেন, এর ফলে বিনা রেজিস্ট্রেশনে একের পর এক প্রকল্প গড়ে তুলছে নির্মাণ সংস্থাগুলি। ফলে তাদের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। ক্রেতারা অসহায় অবস্থার শিকার।

এই অবস্থায় দ্রুত রেরা চালু করার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়েছে এফপিসিই।

উপাধ্যায় বলেন হিরা সুপ্রীম কোর্টে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর অনেকদিন অতিবাহিত এবং পশ্চিমবঙ্গে রেরা চালু করার জন্য তাঁদের লাগাতার চেষ্টা অব্যাহত। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে তাঁরা দেখা করেছেন।

তবে আশার কথা, গত ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ বৃহস্পতি বার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাউসিং ডিপার্মেন্টের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারির সাথে দেখা করেন ইকনমিক অ্যাডভাইসর (হাউসিং), কেন্দ্রের মিনিস্ট্রি অফ আরবান অ্যাফেয়ার্স দিনেশ কপিলার নেতৃত্বে এক ডেলিগেশন। এই ডেলিগেশনে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন এফপিসিই- এর সভাপতি এবং সদস্য যথাক্রমে অভয় উপাধ্যায় এবং রাহুল মজুমদার।

সেই মিটিং-এ রাজ্যের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি বলেন যে রাজ্যে রেরা আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গ রেরার চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ করা হবে।

তাই আশা আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পাবেন এবং রিয়েল এস্টেট নির্মাতারাও সঠিক নিয়ম নীতি মেনে কাজ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *