মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করলেন একাধিক তরুণ-তরুণী,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
অঙ্গগত ত্রুটি নিয়ে অনেকেই জন্ম গ্রহণ করেন। চোখ না থাকার জন্য পৃথিবীর রূপ, রস অনুভব করার আগে অনেকেই একরাশ অতৃপ্তি নিয়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন। অনেকের আবার পরবর্তীকালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ত্রুটি দেখা যায় এবং শেষ পর্যন্ত আধুনিক চিকিৎসাও তাকে সুস্থ করে তুলতে পারে না। অথচ সময়মতো অঙ্গ পেলে বহু মানুষ হয়তো বেশ কয়েক দিন পৃথিবীতে আনন্দ উপভোগ করতে পারত। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। সঠিক প্রচারের অভাবের জন্য ইচ্ছে থাকলেও অনেকে মরণোত্তর অঙ্গদান করার জন্য অঙ্গীকার করতে পারে না। অনেক সময় কুসংস্কারও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মাঝেও দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর ধরে প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছে কলকাতার 'গণদর্পণ' সংস্হা।
ব্যাপকভাবে প্রচার না থাকলেও কিছু কিছু সহৃদয় মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকারকে সফল করার জন্য এগিয়ে আসেন। এরকমই একজন ব্যক্তি হলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সোনারপুরের দেবাশীষ দাস। তার ডাকে সাড়া দিয়ে কলেজ পড়ুয়া এবং চাকরির সন্ধানরত রাখি, দেবজিৎ, প্রিয়াঙ্কা, দেবলীনা, গোবিন্দ, অনুপমের মত একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ-তরুণী নতুন যুগের নতুন এক মানবিক ভাবনা নিয়ে এগিয়ে এল মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার নিয়ে। তারপর ক্যানিং স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে 'গণদর্পণ'-এর অঙ্গীকার পত্রে সাক্ষর করলেন। মূল লক্ষ্য তারা যখন না ফেরার দেশে চলে যাবে তখন তাদের সক্রিয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো যেন অন্যের কাজে ব্যবহার করা হয়। জানা যাচ্ছে ১৫ জন মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছে। গণদর্পণের পক্ষে থেকে এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংস্হার সম্পাদক মণিশ সরকার। মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকারকারীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ৬৮ বছরের 'তরুণী' তৃপ্তি বসু। প্রসঙ্গত তিনি প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেন। তাকে কাছে পেয়ে অঙ্গীকারকারীরা আলাদা উৎসাহ অনুভব করে।
মণিশ বাবু বললেন - এইভাবে সমস্ত কুসংস্কার ও দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে নব প্রজন্ম যদি এগিয়ে আসে তাহলে অনেক মানুষ পৃথিবীর রূপ যেমন উপভোগ করতে পারবে তেমনি অনেক অসুস্থ মানুষ অঙ্গ পেয়ে হয়তো আরও কিছুদিন সুস্থভাবে বাঁচার সুযোগ পাবে। তিনি
মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকারীদের অন্যতম কলেজ ছাত্রী রাখি অধিকারী বললেন - ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োগ করা। মৃত্যুর পরও অন্যের মাধ্যমে পৃথিবীকে দ্যাখা। সেই ইচ্ছে পূরণ করার জন্য মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করলাম। শুধু তাই নয় এবার ব্যাপকভাবে প্রচার করার চেষ্টা করব। সমস্ত ভয় কাটিয়ে রাখি ইতিমধ্যে রক্তদানও করেছে।