জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে
লালারসের নমুনা নাইসেডে পাঠানোর নির্দেশ,
খায়রুল আনাম,
চিকিৎসকেরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূত্র ধরে যাই-ই বলুন না কেন, জেলা বীরভূমে জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বর্তমান সময়ে ঠাণ্ডা-গরমের সঙ্গে কমবেশি হামেশাই বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে শিশুরা ঠাণ্ডা-গরমের প্রকোপে পড়ে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে যেহেতু বলা হয়েছে, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাই, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে কোনও শিশু ঠাণ্ডা-গরমে জ্বরে আক্রান্ত হলেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেই জেলার সিউড়ির জেলা সদর হাসপাতালে জ্বর নিয়ে যে ১০৪ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিলো, তাদের মধ্যে ৫৫ জনকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ৮৫ জন শিশুর মধ্যে ৩০ জনকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগে এখানে ২০ জন আক্রান্ত শিশুকে ভর্তি করা হলেও, সেই সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে ৩৬টিতে। এজন্য রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে বৈঠকও করেছেন। সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর হলেও বেশিরভাগই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে আক্রান্ত হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। যে পরিবারের বড়রা জ্বরে ভুগছেন, সেই পরিবারের দু’বছরের নীচে শিশুদের পৃথকভাবে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কোনও এলাকায় যদি দশ জন শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে আক্রান্ত শিশুদের নাক এবং মুখের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে নাইসেডে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন কোন শিশুদের ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা-সহ বি সি রায় রায় শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কথাও বলেছেন। ঠিক হয়েছে যে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ভর্তি হলে তাদের আলাদা মাস্ক এবং পালস অক্সিমিটার সরবরাহ করা হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায়, পার্শ্ববর্তী বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তা পাঠাবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সব শিশু ভর্তি রয়েছে তারা জ্বর ও সর্দি কাশি নিয়ে ভর্তি হওয়ায় আর এস ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে এই জীবাণুর নমুনা পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় তা কলকাতায় পাঠাতে হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও নমুনা কলকাতায় পাঠানো হয়নি। এমন কী কোনও শিশুর রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। তবে, ভর্তি হওয়া শিশুরা নিউমোকক্কাস জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে অনুমান করে যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে তাতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই চারটি শিশু স্ক্রাব টাইফাস ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। এবং চিকিৎসার ফলে তারা সুস্থ রয়েছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে। এই সময় ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে ।।