Spread the love

 প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ফের সিবিআই তদন্ত, বরখাস্ত একসাথে ২৬৯ জন!,

মোল্লা জসিমউদ্দিন , ১৩ জুন,

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত অব্যাহত। সোমবার ফের সিবিআই তদন্ত এর নির্দেশ জারি করা হলো কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের   নির্দেশে একসাথে ২৬৯ জনের চাকরি গেল। যা কার্যত নজিরবিহীন বলা যায়। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার  থেকে এই বরখাস্ত শিক্ষকরা নিজেদের স্কুলে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে  আদালত। আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট-এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যে দ্বিতীয় নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করে থাকে , তা বেআইনি বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস। ওই তালিকায় ২৬৯ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল শিক্ষক হিসেবে ।এদিন আদেশনামায়  প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদের সচিবকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সিবিআই দফতরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়।নির্ধারিত সময়ে হাজিরও হয়েছেন  মানিক বাবু। গত ২০১৪ সালে প্রাথমিক টেট-এ পরীক্ষায় বসেছিলেন প্রায় ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে ২৬৯ জন এক নম্বর করে বাড়িয়ে সফল  উল্লেখ করা হয় তালিকায় । এর মধ্যে হুগলি জেলাতেই ৬৮ জন। গত ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সেই তালিকা প্রকাশিত হয়। এ দিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী এই খতিয়ান তুলে ধরেন এজলাসে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীর দেওয়া এই তথ্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত । কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কিভাবে ২৬৯ জনের জন্য নিয়োগ তালিকা প্রকাশিত হল?  সেই প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি।  তাছাড়া, প্রশ্ন ভুলের কারণ দর্শিয়ে কিভাবে শুধুমাত্র ২৬৯ পরীক্ষার্থীর এক নম্বর করে বেড়ে গেল, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে আদালত।  প্রতুত্তরে  পর্ষদের আইনজীবী এজলাসে জানিয়েছেন , -‘ যোগ্যদের বঞ্চনা করা হয়েছে, এই অভিযোগে বিক্ষোভ আন্দোলন হয়। আন্দোলনকারীরা  পর্ষদে আবেদন করেন। জেলা ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন জমা পড়ে। সেই আবেদন থেকেই প্রশ্ন ভুলে ১ নম্বর করে যোগ করে ২৬৯ জন টেট উত্তীর্ণ হন’। এই যুক্তি খারিজ করে দেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই নিয়োগ তালিকা বেআইনি ঘোষণা করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি ওই ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। এই শিক্ষকরা যাতে আজ  থেকে স্কুলে ঢুকতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিদর্শকদের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি তাঁর আদেশনামায় উল্লেখ করেন – ‘এদিন থেকেই এই মামলার এফআইআর দায়ের করে অভিযোগের তদন্ত শুরু করবে সিবিআই। যেহেতু নিয়োগে এই অনিয়মের দায় পর্ষদ সভাপতি এড়াতে পারেন না, তাই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং পর্ষদের সচিবকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। রমেশ মালিক নামে এক টেট পরীক্ষার্থীর করা মামলার ভিত্তিতেই এ দিন এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।এরপরেই সোমবার সন্ধ্যায় সিবিআই দফতরে  হাজিরা দেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ।আদালত সুত্রে আরও জানা গেছে – ২০১৪ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই মতো টেটের পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। ফলপ্রকাশ হয় ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে। ওই বছরই প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। পরের বছর অর্থাত্‍, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে প্রায় ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৪২ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষকে হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।এদিনের সিবিআই তদন্ত এর নির্দেশ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির গভীরতা কতদূর তা আরও একবার ইংগিত দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *