নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না যশোর কারাগারে আটক ৩১ ভারতীয় নাগরিক
কাজী নূর।
ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশসহ নানা অভিযোগে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটক ৩১ ভারতীয় নাগরিককে আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে পাঠানো হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। সাজাপ্রাপ্ত এসব আসামীর সাজার মেয়াদ অনেক আগে পূর্ণ হলেও ভারত সরকারের সদিচ্ছার অভাবে আজও তারা ফিরতে পারেননি নিজ দেশে। এসব বন্দীদের মধ্যে চার থেকে পাঁচজন বাংলা ভাষায় কথা বলতে এবং বুঝতে পারেন। বাকী বন্দীদের ভাষা কেউ বুঝতে পারেন না। যে কারণে অত্যন্ত করুণ এবং মানবেতর দিন কাটছে তাদের। এসব বন্দীদের পরিবার পরিজন সন্তানদের কাছে ফিরে যাবার আকুতি কারাগারের প্রাচীর ভেদ করে পৌঁছায় না নিজ দেশের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া ৩১ ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জনের প্রত্যাবাসনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে অনেক আগেই। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) যশোর- ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিজিবি যশোর- ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী এ প্রতিবেদককে বলেন, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ‘বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স’ (বিএসএফ) কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও সেখান থেকে এখনও কোনো সন্তোষজনক সাড়া মেলেনি।
এদিকে কারাগারের অন্য একটি সূত্র বলছে, এই ৩১ জন ভারতীয় বন্দীর মধ্যে অধিকাংশ-ই বিনা পাসপোর্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে আটক হন। পরবর্তীতে আদালত তাদের সাজা প্রদান করে কারাগারে পাঠায়। এসব বন্দীদের বেশিরভাগ লেখাপড়া জানে না এবং তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব দুর্বল। যে কারণে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা তাদের পরিবার জানে না। ৩১ বন্দীকে ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যশোর জেলা লিগ্যাল এইড সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। জানতে চাইলে যশোরের মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস যশোর’র প্রধান নির্বাহী পরিচালক (সিইও) শ্রী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক মুঠোফোনে ‘জয় বাংলা’কে বলেন, ৩১ ভারতীয় বন্দীর নিজ দেশে ফিরতে না পারাটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আট বছর আগে সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথচ এমন অনেকে এখনও কারান্তরীণ, দেশে ফিরে যেতে পারছেন না এমন ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক এবং দুঃখজনক। সাজার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়া এসব বন্দীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ৬ নভেম্বর ‘রাইটস যশোর’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।