দেখুন TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘ভোটযুদ্ধ-দেশের লড়াই, পর্ব-৫’, ৭ এপ্রিল, রবিবার TV9 বাংলায়, রাত ১০টায়।
কলকাতা, ৭ এপ্রিল: ভারতীয় রাজনীতিতে গত শতকের নয়ের দশক পুরোপুরি উথালপাতালের। কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের মুঠি আলগা, দেশে দক্ষিণ ভারতীয় প্রথম প্রধানমন্ত্রী, হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান, অর্থনীতির দরজা হাট, একের পর এক কেলেঙ্কারি, মুম্বই বিস্ফোরণ, দাঙ্গা, দিল্লির মসনদে আয়ারাম-গয়ারাম সরকার, বামেদের সুবর্ণসুযোগে জল, পোখরান, কার্গিল যুদ্ধ, বাংলায় তৃণমূলের আত্মপ্রকাশ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির হাত ধরাধরি– ঘটন-অঘটনের লেখাজোখা নেই!
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে ফের অকাল লোকসভা নির্বাচনের প্রচার চলার সময়ই ঘটে যায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। পিছিয়ে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে সংসদ ত্রিশঙ্কু, একক বৃহত্তম দল হলেও নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা হাতের বাইরে ছিল পি ভি নরসিমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস মন্ত্রিসভার। যদিও নরসিমা রাওই গান্ধী পরিবারের বাইরে প্রথম, যিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুরো কার্যকালের মেয়াদ শেষ করতে পেরেছিলেন। পরে সংসদে ফ্লোর টেস্ট-এর বৈতরণী পেরোতে গিয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারির কালো দাগ সেঁটে যায় তাঁর সরকারের গায়ে। অভিযোগ ওঠে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতারা অর্থ নিয়ে নরসিমা রাওয়ের সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। অবশ্য দিল্লিতে নরসিমা সরকার ভাল করে থিতু হওয়ার আগেই শেয়ার কেলেঙ্কারির বিস্ফোরণে কেঁপে যায় গোটা দেশ। মুম্বইয়ের দালাল স্ট্রিটে পরিচিত নাম ছিলেন স্টকব্রোকার হর্ষদ মেহতা। শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীকেও নিয়েও টানাটানি। পরে হর্ষদ মেহতার আইনজীবী রাম জেঠমালানি দাবি করেন, তাঁর মক্কেল প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওকেও এক কোটি টাকা দিয়েছেন।
দিল্লির শাসকদল তখন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাওয়ের চালু করা উদার অর্থনীতিতে ভাসছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। নরসিমাকে তাঁর ‘পথপ্রদর্শক’ ও ‘ভারতের উদার অর্থনীতির জনক’ বলে একাধিক বার উল্লেখ করেছেন তাঁর জমানার অর্থমন্ত্রী মনমোহন।
রাজকোষের টানাটানি সামলাতে এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করতে আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। টাকার অবমূল্যায়ন এবং ব্যাপক সংস্কার করা হয় ব্যাঙ্কের ঋণ নীতিতে। সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন শিল্পনীতি। দেশের অর্থনীতির ওপর সমান প্রভাব না পড়লেও স্পষ্ট দেখা যায় যে, জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে, নাগরিকের আয়ু বেড়েছে এবং শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে তার সঙ্গে বেড়েছে অসাম্যও। আর জন্ম নিয়েছে উদারনীতির জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সংসদীয় রাজনীতি নিয়ে যাঁদের মাথাব্যথা কম!
ঘুষ, শেয়ার ছায়ায় নরসিমা সরকার মেয়াদ শেষ করলেও নির্বাচনের পর একাদশ লোকসভা ভোটে ফের ত্রিশঙ্কু হল সংসদ। এক ধাক্কায় ১৬১ আসন বিজেপির দখলে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার স্থায়ী হল মাত্র ১৩ দিন। সেই সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সামনে ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ চলে এল। কিন্তু এক ‘ঐতিহাসিক ভুল’-এ সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বে তাতে জল ঢেলে দিলেন। বাইরে থেকে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে দিল্লির কুর্সিতে বসলেন কর্নাটকের ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের জনতা দল নেতা এইচ ডি দেবেগৌড়া। তাঁর এই সরকার ১৮ মাসের বেশি টেকেনি।
একই সংসদ দেখল তিন প্রধানমন্ত্রীকে। দেবেগৌড়ার পর প্রধানমন্ত্রী হলেন আই কে গুজরাল। সীতারাম কেশরীর কংগ্রেস সমর্থন তুলে নেওয়ার একই পরিণতি হল তাঁর ও দ্বিতীয় ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের। তার আগেই ভেঙে গিয়েছিল কংগ্রেস। সব মিলিয় দিল্লিতে চরম ডামাডোল। আবার অকাল নির্বাচনের ঘোষণা। ১৯৯৮-এর নির্বাচনে আরও বেশি আসন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল বিজেপি। তবে এই লোকসভা নির্বাচনেও স্থায়ী সরকার পায়নি দেশ। এবার তেরো মাসে পড়ে গেল বাজপেয়ী সরকার। ফলে ১৯৯৮ সালে ফের নির্বাচন। আবার সরকার গঠন করল এনডিএ। কিন্তু সে বারও পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারেননি বাজপেয়ী। তেরো মাসের গেরোতেই আটকে যান তিনি, সরকার পড়ে যায়। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের রায়ও ছিল বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের পক্ষে। তৃতীয় বার সুযোগ পেয়ে প্রথম অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়লেন বাজপেয়ী।
নরসিমা রাওয়ের আমলে দিল্লির পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণের চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল আমেরিকার নজরদারিতে। তবে ১৯৯৮-এর মে মাসে পোখরানে পরীক্ষামূলক পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিলেন বাজপেয়ী। দেশে নয়া জাতীয়তাবাদের আস্ফালনের সেই শুরু।
১৯৯৯-এর মে মাসে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে মুশকো, দ্রাস, কাকসার ও বাতালিক সেক্টর, কার্গিল সেক্টরে ঢুকে পড়ে পাক হানাদাররা। হটাতে অভিযানে নামে ভারতীয় সেনা– ‘অপারেশন বিজয়’। ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই বিজয় ঘোষণা করে ভারত। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করেছিল, কাশ্মীরি জঙ্গিরাই এ সব করছে। পরে আত্মজীবনী ‘ইন দ্য লাইফ অব ফায়ার’-এ প্রাক্তন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ স্বীকার করেছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে ছিল পাকসেনাও। আন্তর্জাতিক মহলকে কিছু করতে হয়নি। তার আগেই পাক সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। অথচ সেই বছরের শুরুতেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছেছিল। চালু হয়েছিল দিল্লি থেকে লাহোর পর্যন্ত ‘সদা-এ-সরহদ’ বাস পরিষেব। ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্ত দিয়ে চলাচল করত সেই বাস। কার্গিল যুদ্ধের সময়েও চালু ছিল বাস পরিষেবা। ওই বাসে চেপে লাহোর গিয়েছিলেন বাজপেয়ী। উদ্দেশ্য ছিল, দুই দেশের মধ্যে শান্তির সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা।
নয়ের দশকের শেষ পর্বেই বাংলাতেও বাঁক নিয়েছিল রাজনীতির মূলধারা। তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করে সিপিএমের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মুখ সমরের গোড়াপত্তন তখনই। বামেদের বেকায়দায় ফেলতে বিজেপির সঙ্গে ভোটের দোস্তি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মমতার যোগদান। গঙ্গা-যমুনা দিয়ে জল গড়িয়েছিল অনেক।
TV9 বাংলার নিউজ সিরিজে এবার নয়ের দশকের লোকসভা নির্বাচন ও টালমাটাল ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতির নানা কাহন। সঙ্গে বিশিষ্টদের বিশ্লেষণ। দেখুন TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ‘ভোটযুদ্ধ-দেশের লড়াই, পর্ব-৫’, ৭ এপ্রিল, রবিবার TV9 বাংলায়, রাত ১০টায়।