দুয়ারে রেশন কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে ডিলাররা
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
অবশেষে আশঙ্কা সত্যি হলো।গত বুধবারে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল করলেন মামলাকারী রেশন ডিলাররা।প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।তবে প্রধান বিচারপতির এজলাস মামলাটি সংশ্লিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চে অর্থাৎ বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয় শুনানির জন্য। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির পর দুয়ারে রেশন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। এতে আপত্তি জানিয়ে বেশ কয়েকজন রেশন ডিলার ‘আয়ের থেকে ব্যয় বেশি’ যুক্তি কে সামনে রেখে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন।গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে এই মামলার তৃতীয় শুনানি চলে। সেখানে বিচারপতি জানিয়েদেন – ‘রাজ্য সরকারের এটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি ,তাই স্থগিতাদেশ জারির প্রশ্নই উঠেনা’। মামলাকারী রেশন ডিলারদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।রেশন ডিলারদের একাংশের দাবি – ‘দুয়ারে রেশন প্রকল্প আইনত সঠিক নয়। এর আগে রাজ্যের বাইরে দিল্লিতে এই ধরনের প্রকল্প চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তখনও তাতে বিভিন্ন ধরনের বাধা তৈরি হওয়ার কারণে সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি’।রেশন ডিলারদের আরও দাবি, – ‘এই দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু করার ফলে, ডিলারদের উপর চাপ বেড়েছে। ডিলারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছে দিয়ে আসতে হচ্ছে। এর জন্য তাঁরা সরকারের থেকে আলাদা করে কোনও সাহায্যই পাচ্ছেন না। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, রেশন ডিলারদের হাতে তেমন লোক-বলও নেই, যাতে তাঁরা স্থানীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছে দিতে পারেন’। সরকারের তরফে রেশন আইনে কোনওরকম পরিবর্তন করা হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল রেশন ডিলারদের। এমনই একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া নিয়ে তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টে তাঁরা আবেদন করেছিলেন, যাতে দুয়ার রেশন প্রকল্পের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।অপরদিকে , রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, -‘এই দুয়ারে রেশন প্রকল্পটি একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে কেমন কাজ হচ্ছে, কতটা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সেই সব দিক খতিয়ে দেখে তারপরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এই প্রকল্প আগামী দিনে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা। আর রেশন আইনের বিষয়টিও পরিরর্তনশীল’। আগামী দিনে প্রয়োজন হলে রাজ্যের রেশন সংক্রান্ত আইনে সংশোধন করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছিল রাজ্যের তরফে।গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহা কার্যত রাজ্যের এই কথার উপরেই সিলমোহর দিয়েছেন। দুয়ার রেশন প্রকল্প বন্ধ করার জন্য রেশন ডিলারদের তরফে যে আবেদন কলকাতা হাইকোর্টে জমা করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দেওযা হয়েছে।রাজ্য সরকার দুয়ারে রেশন নিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বাড়ি গিয়ে রেশন দেওয়ার জন্য ডিলারদেরই গাড়ির খরচ, প্রচারের খরচ এবং সংরক্ষণের খরচ বহন করতে হবে। দায়ের হওয়া মামলায় ডিলাররা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই বিপুল খরচ তাঁরা বহন করতে পারবেন না। পাশাপাশি ডিলারদের এত লোকবল নেই যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে রেশন দেবেন, সে কথাও বলেন। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সমর্থনে যুক্তি সাজিয়ে মামলাকারীরা দিল্লির উদাহরণ টানা হয়। যেখানে এই একই ধরনের প্রকল্প আনার চেষ্টা হয়েছিল, কেন্দ্র অনুমোদন দেয়নি।কলকাতা চারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে রাজ্য জানায়, -‘শুধু সেপ্টেম্বর মাসের জন্য এটা একটা পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসাবে চালু হচ্ছে। প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা দেখে বাকি সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে’।কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই ডিভিশন বেঞ্চে গেলেন রেশন ডিলারদের একাংশ। আগামী সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি রয়েছে এই আপিল পিটিশন টি এর বলে জানা গেছে।