তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অতনু কোন দলের ?

লোকসভা ভোটের আগে ঘর গোছাতে গিয়ে বেসামাল বিজেপি

        খায়রুল  আনাম

অতীতে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। এবারের লোকসভা ভোটে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে বীরভূম জেলার বোলপুর ও বীরভূম-এই দু’টি লোকসভা আসনই তারা দখল করবে বলে হুংকার দিয়ে বিজেপির  জেলা নেতৃত্বের একটা অংশ  জেলায় দলের বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে দলের উচ্চস্তর থেকে বিপুল পরিমাণের অর্থ নিয়ে এসে নিজেদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বাড়াচ্ছেন।  আবার দলের এক শ্রেণির নেতা ভোটে জেতার লক্ষ্য নিয়ে ভোটে না লড়ে ইলেকশন  ফাণ্ড থেকে আসা  টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিচ্ছেন।  যাতে সেই টাকা থেকে  মোটা সুবিধা পাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্য  নিয়ে।  জেলার বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে  এইসব অভিযোগ বিরোধী কোনও দলের নেতা করছেন না। বিজেপির জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে  এইসব মারাত্মক  অভিযোগ বিজেপিরই জেলা নেতারা। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরের ক্ষত বার বার বাইরে আসছে।  এমন কী,  রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী জেলার সাঁইথিয়ায় পদযাত্রায় অংশ নিতে এসে যখন পথে পা রাখেন দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহাকে সঙ্গে নিয়ে তখন দেখা যায় যে,  সেই যাত্রাপথের দু’পাশের দেওয়ালে  ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে  যে ছাপানো পোস্টার  লক্ষ্য করা যায়, তাতে লেখা ছিলো-পৌরসভা ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের কাছে টাকা খেয়ে  বিজেপিকে হারানোর মূল কাণ্ডারী ধ্রুব সাহা দূর হটো।

      এবার সেই সাঁইথিয়া শহরেই বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা একটি ধিক্কার  মিছিলে  তৃণমূল কংগ্রেসের  জেলা  সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে পথ হাঁটায় বিজেপির অন্দরেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।  এনিয়ে বিজেপির  জেলা সভানেত্রী রেশমি দে  জানিয়ে দিয়েছেন,  দলের সামনের সারিতে গদ্দারকে মানছি না,  মানব না।  মল্লারপুরের বাসিন্দা অতনু চট্টোপাধ্যায় এক সময় বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন।  ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে অতনু চট্টোপাধ্যায়  বিজেপি প্রার্থীর ভোটের দায়িত্বেও ছিলেন। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে  দলীয় তহবিলের ভোটের খরচের  লক্ষ লক্ষ টাকা  আত্মসাৎ  করার অভিযোগও ওঠে।  এরপরই  অতনু চট্টোপাধ্যায়  বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় পতাকা হাতে তুলে  নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে  যোগ দেন এবং পরবর্তীতে  বিজেপি  ত্যাগী অতনু চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল কংগ্রেসের  জেলা সম্পাদকের পদে বসান অনুব্রত মণ্ডল। তখন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা অতনু চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে  বলেছিলেন, রাজনৈতিক অভিসন্ধির জন্য  অতনু চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসে গেছেন। কাকের গায়ে  ময়ূরের পাখনা লাগিয়েছিলাম।  কিন্তু কাক তো কাক-ই থাকে। এবার সেই অতনু চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সাঁইথিয়ায় ধ্রুব সাহার পথ হাঁটায়  দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যদিও ধ্রুব সাহা বলছেন,   বিগত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে অতনু চট্টোপাধ্যায়  বিজেপির হয়ে  কাজ করছেন। এক সময় অভিমানে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে গিয়ে ছিলেন। এখন  আবার ঘরে ফিরে এসেছেন।  অপর দিকে বিজেপির সাংগঠনিক নিয়মে অতনু চট্টোপাধ্যায়কে বিজেপিতে আসতে হলে তাঁকে বিজেপির  বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের মাধ্যমে  আসতে হবে।  কিন্তু সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল জানিয়ে দিয়েছেন, অতনু চট্টোপাধ্যায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে চলে গিয়েছেন। ওঁর সাথে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।  অপর দিকে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী  জানিয়ে দিয়েছেন,  অনেকদিন আগেই অতনু চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে।  তা’হলে বিজেপির সাংগঠনিক নিয়মে অতনু চট্টোপাধ্যায়কে যেখানে দলে নেওয়া না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের,  সেখানে অতনু চট্টোপাধ্যায়কে দলে জায়গা দেওয়ার কথা দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলছেন কী ভাবে ?  এতে তো দলের সাংগঠনিক রীতিনীতিই লঙ্ঘিত হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে  বিজেপি নেতা  অনিল সিং তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছেন–দুই চোর আবার এক হলো।  বিজেপির এই অভ্যন্তরীন কোন্দলে  আখেরে কিন্তু রাজনৈতিক  দিক থেকে নিশ্চিতভাবে লাভবান   হচ্ছে  তৃণমূল কংগ্রেস ।। 

ছবি : ধ্রুব সাহার সঙ্গে অতনু চট্টোপাধ্যায়। 

Leave a Reply