বৈদুর্য্য ঘোষাল , (আইনজীবি কলকাতা হাইকোর্ট),
তন্ময় বিশ্বাসের এই নতুন লেখাটিকে বই আকারে এনেছে বিভা প্রকাশনী। এক ঘেয়েমি সাহিত্যের স্বাদ বদলাতে এর তুলনা নেই। তন্ত্রকে গল্প বানিয়ে পথচলা এরকম লেখা এখন ভীষন বিরল।
মূলত সমগ্র তন্ত্র শাস্ত্র দুটি ভাগে বিভক্ত। শিব কথিত আগম আর পার্বতী কথিত নিগম। তন্ত্রের কূট তত্ত্বগুলোকে সহজ করে পরিবেশন করা হয়েছে। এর সাথে যোগ-তত্ত্ব , পুরাণ মিলে মিশে গেছে। এখানেই অন্যান্য তন্ত্র সম্পর্কিত বইগুলো থেকে এটি স্বতন্ত্র। আসামের মায়াঙ থেকে মধ্য প্রদেশের নর্মদার তীর এমনকি সুদূর তিব্বত অবধি এই কাহিনির বিস্তার ঘটেছে। সমগ্র তন্ত্র শাস্ত্রকে নিম্নগামী তান্ত্রিকের থেকে রক্ষা ,সর্বোপরি দৈবী উপাদান সাধারণের হাত থেকে বাঁচিয়ে পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবন যাপনের গতি বজায় রাখতে ওই মায়াঙে এক কেল্লা প্রতিষ্টা করেছিলেন আদি তান্ত্রিক। সেখানে প্রতি চার বছর অন্তর কৌশিকী অমাবশ্যায় তন্ত্র প্রতিযোগিতা চলে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন শাখা প্রশাখার তন্ত্র গুরু এই সম্মান পাবার আশায় আসে কিন্তু নির্বাচিত হয় মাত্র একজন। অনেকে ধাপ পেরোবার আগেই মৃত্যু বরণ করে। যে জেতেন সে মহাগুরুর সম্মান লাভ করে লুক্কায়িত দৈবী উপাদানের পাহারাদার নিযুক্ত হন। কিন্তু গীতার অমোঘ বাণী এখানেও ফলে যায়। মানব মনের অন্ধকারে সৃষ্টি হয় ষড়যন্ত্র , বিভেদ আর হিংসা। সাধকের পদস্খলন ঘটে নৈতিকতার সোপান থেকে।বিঘ্নিত হতে থাকে সাধারণ নিয়ম আর ভারসাম্য। ” যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥ পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাং। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥ ” – আবির্ভাব ঘটে শিবের অংশজাত অনিকেতের। অসীম শক্তির আধার হয়েও মানব শরীর ধারণের জন্য তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে শোক, তাপ , দুঃখ আর ক্রোধ। পৃথিবীর সব অবতারের ক্ষেত্রেই মানব শরীর ধারণের খেসারত দিতে হয়েছে, অনিকেতও তার ব্যতিক্রম নয়। তাকে সাধারণের মতোই তন্ত্র শিক্ষা লাভ করতে হয়েছে কঠোর সাধনার মধ্যে দিয়ে। তন্ত্রের একঘেয়েমি তথ্যের নিরস কঠোরতা দূর করতে অভিযানসুলভ চমকের জন্য কল্পনার বাতাবরণ সৃষ্টি করতে হয়েছে। পৃথিবীর তিনভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের মতন এই অভিযানেও কল্পনা আর বাস্তবের অনুপাত সমান। বাকিটা ভেতরের অক্ষরের সারি বলবে।তবে এইটুকু বলতে পারি অন্যান্য তন্ত্র থেকে এই অভিযান সম্পূর্ণ অন্যরকম।